বিশ্ব

ইসরাইলের হামলায় সামরিক প্রধানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল হুতি

Advertisement

ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি জানিয়েছে, তাদের সামরিক প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আবদ আল-ঘামারি ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় এক বিবৃতিতে ঘামারির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে গোষ্ঠীটি। তবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য জানানো হয়নি।

হুতির পক্ষ থেকে নিশ্চিতকরণ ও প্রতিক্রিয়া

হুতিদের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, 

“ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মানজনক লড়াইয়ের সময় আমাদের কমান্ডার মুহাম্মদ আল-ঘামারি শাহাদত বরণ করেছেন। তার রক্ত বৃথা যাবে না, এই অপরাধের জবাব দেওয়া হবে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরাইলের সঙ্গে তাদের সংঘাত এখনো শেষ হয়নি এবং তারা “অপরাধের প্রতিশোধমূলক জবাব” দিতে প্রস্তুত। হুতিরা দীর্ঘদিন ধরে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ইসরাইলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ইসরাইলি বাহিনী ইয়েমেনে হুতিদের সামরিক অবকাঠামোর ওপর সফল হামলা চালিয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘামারি নিহত হয়েছেন।”

তিনি আরও যোগ করেন, “যে কেউ ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালাবে, আমরা তার অবস্থান নির্বিশেষে প্রতিশোধ নেব। ঘামারি ও তার সহযোগীরা ইসরাইলের নাগরিকদের হত্যা ও হামলার পরিকল্পনা করছিল।”

ইসরাইল-হুতি সংঘাত

ইসরাইল ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা নতুন নয়। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই হুতিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরাইলের দিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। জবাবে ইসরাইলও ইয়েমেনের রাজধানী সানা, হোদাইদা ও সাদাহ প্রদেশে হুতিদের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে আসছে।

এর আগে, আগস্ট মাসে ইসরাইলের বিমান হামলায় হুতিদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিহত হন। তখন থেকেই ঘামারি ইসরাইলের টার্গেট লিস্টে ছিলেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর ধারণা।

কে এই মুহাম্মদ আল-ঘামারি?

মুহাম্মদ আবদ আল-ঘামারি ২০১৬ সাল থেকে হুতি গোষ্ঠীর সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ওই বছর তাকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়।

২০২১ সালে তিনি হুতিদের সেনাপ্রধান বা কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে দায়িত্ব নেন। তখন তিনি আবদুল খালেক আল-হুতির স্থলাভিষিক্ত হন, যিনি বর্তমানে গোষ্ঠীর দ্বিতীয় প্রধান।

ঘামারি ছিলেন হুতির “জিহাদ অফিস”-এর সদস্য—যেখান থেকে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান পরিচালনার কৌশল নির্ধারিত হয়। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায়ও তার নাম ছিল, ইয়েমেনের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য “হুমকি” সৃষ্টি করার অভিযোগে।

হামলার বিস্তারিত ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইসরাইলি বিমানবাহিনী ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হুতিদের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সেই হামলায় নয়জন নিহত হন, যাদের মধ্যে কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন।

হামলার পর হুতিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি ছিল তাদের নেতৃত্ব ধ্বংসের উদ্দেশ্যে চালানো পরিকল্পিত অভিযান। তবে ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছিল, “আমরা হুতিদের সামরিক হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।”

ইরান, যা হুতিদের অন্যতম প্রধান মিত্র, এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইসরাইল ইয়েমেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এমন আগ্রাসনের জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে।”

নতুন সংঘাতের আশঙ্কা

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘদিনের। হুতিদের সামরিক প্রধানের মৃত্যু সেই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হুতিদের শক্ত ঘাঁটি ইয়েমেন এখন নতুন করে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুতিদের পাল্টা হামলা আরও তীব্র হতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুল্লাহ আল-সাবরি বলেন, “ইসরাইল এখন একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে—গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে। হুতিদের সামরিক নেতৃত্বকে টার্গেট করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতের আক্রমণ দুর্বল হয়। তবে এই হামলা হুতিদের প্রতিশোধস্পৃহা আরও বাড়িয়ে তুলবে।”

ইসরাইল ও হুতিদের সংঘাত এখন আরও জটিল মোড় নিচ্ছে। মুহাম্মদ আবদ আল-ঘামারির মৃত্যু শুধু ইয়েমেন নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য নতুন অস্থিরতার বার্তা বহন করছে। একদিকে ইসরাইল বলছে, এটি আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ, অন্যদিকে হুতিরা বলছে, এটি যুদ্ধ ঘোষণা।

পরিস্থিতি এখন কোন দিকে মোড় নেবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, গাজার যুদ্ধ অবসান না হলে ইয়েমেনেও নতুন এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।

এম আর এম – ১৮১৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button