বিশ্ব

পশ্চিমা আগ্রাসন ঠেকাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঐক্যের ডাক ইরানের

Advertisement

 ইরান পশ্চিমা আধিপত্যের চাপ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাপের প্রেক্ষিতে।

ইরানের আহ্বান ও বিবৃতি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সম্প্রতি জাতিসংঘে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলোর পুনঃনিষেধাজ্ঞা আরোপের আইনি ভিত্তি নেই। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য আরও দৃঢ় করতে হবে যাতে তারা আধিপত্যবাদী আগ্রাসন প্রতিহত করতে পারে।”

আরাঘচি বলেন, পশ্চিমা শক্তিগুলো একতরফাভাবে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ইরানের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করছে। এ অবস্থার মোকাবিলায় দক্ষিণের দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

পারমাণবিক কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান বলেন, পার্লামেন্ট এবং সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পারমাণবিক কর্মসূচি তত্ত্বাবধানে আইএইএ’র সীমিত প্রবেশ বজায় থাকবে। তবে ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে এবং কোনো ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়ে পিছপা হবে না।

পশ্চিমাদের একের পর এক নিষেধাজ্ঞা এবং হুমকির প্রেক্ষিতে ইরান কূটনৈতিক জোট ও ত্রিপাক্ষিক আলোচনা চালাচ্ছে। তেহরান, মস্কো এবং বেইজিং সম্প্রতি এক বৈঠকে একমত হয়েছেন যে, পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে তেহরানকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয়। এসব নিষেধাজ্ঞা শুধু ইরানেই নয়, বিশ্ব দক্ষিণের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে।

ইরান ত্রিপাক্ষিক কূটনৈতিক বৈঠকের মাধ্যমে এই চাপের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইছে। দেশটি মনে করছে, ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ একটি বহুমুখী আঞ্চলিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

ইরানের আহ্বান বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ন একটি সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান ও তার সহযোগী দেশগুলো পশ্চিমা একাধিপত্যের বিরুদ্ধে একজোট কৌশল অবলম্বন করতে পারে।

আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা রক্ষায় সহায়তা করতে পারে। একই সঙ্গে, এটি পশ্চিমা দেশগুলোর একতরফাভাবে চাপ প্রয়োগের সম্ভাবনা কমাতে পারে।

কূটনৈতিক বৈঠক ও সহযোগিতা

সম্প্রতি তেহরানে অনুষ্ঠিত ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে রাশিয়া, চীন ও ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে পশ্চিমাদের চাপ, একতরফা নিষেধাজ্ঞা এবং সম্ভাব্য ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয়।

ইরানের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গারিবাবাদি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি জাতিসংঘের মাধ্যমে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করে, তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি বলেন, তিন দেশের মধ্যে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।

বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া, চীন ও ইরান এখন একটি যৌথ কৌশলগত বলয়ে রূপ নিচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য পশ্চিমা একাধিপত্য এবং রাজনৈতিক চাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

ইরানের ঐক্যবদ্ধ আহ্বান এবং ত্রিপাক্ষিক কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণের দেশগুলো একে অপরের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করতে পারবে। এটি শুধুমাত্র ইরানের স্বার্থ রক্ষা করবে না, বরং আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ইরান পশ্চিমা আগ্রাসন ঠেকাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। চলমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাপ, নিষেধাজ্ঞা এবং একতরফাভাবে শক্তি প্রয়োগ মোকাবিলায় দক্ষিণের দেশগুলোকে একত্রিত করার এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, আগামী মাসগুলোতে পারস্পরিক পরামর্শ ও সহযোগিতা আরও গভীর হলে এটি বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন এক চিত্র উপস্থাপন করবে।

এম আর এম – ১৮১৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button