
মিশরের শার্ম আল শেখে শান্তি সম্মেলনে বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক নেতারা যে মঞ্চে একত্রিত হয়েছেন, সেখানে ট্রাম্প এক সময় ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি মঞ্চে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে তাকিয়ে বলেন, “ভারত একটি দুর্দান্ত দেশ। আমার একজন খুব ভালো বন্ধু দেশের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন এবং তিনি দুর্দান্ত কাজ করছেন।”
ট্রাম্প ওই প্রসঙ্গে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি ভারত ও পাকিস্তান সুন্দরভাবে একসাথে বসবাস করতে পারবে।” তাঁর এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এই ‘মৌন বার্তা’ বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
কূটনৈতিক সঙ্কেত ও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড
ট্রাম্পের মন্তব্যকে অনেক বিশ্লেষক এক ধরনের কূটনৈতিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন— যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনাকে সমাধানের দিকে ধাবিত করতে চান। মঞ্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে “বন্ধু” বলাটা এবং পাকিস্তানকে সঙ্কেতমূলকভাবে প্রশংসা করা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফেরও মন্তব্য ছিল, “ট্রাম্পের নিরলস প্রচেষ্টার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ সম্ভব হয়েছে।” এই ধরনের সংশ্লিষ্ট মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সেতুবন্ধনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদির ভূমিকা ও ভারতীয় প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প মোদিকে সরাসরি নাম না করে “ভালো বন্ধু” বললেও, তা স্পষ্ট যে তাঁর উদ্দেশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ করা। বিশ্বমঞ্চে এমন প্রশংসা মোদি সরকারের জন্য কূটনৈতিকভাবে ঘুরিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া মৃদু হলেও ধরনের স্থিতিশীল। আন্তর্জাতিকভাবে ভারত সাধারণত মন্তব্য এড়িয়ে চলেছে, যাতে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে না। তবে রাজনৈতিক মহলে এই মন্তব্য নতুন আলোচনার সূচনা করেছে।
আসন্ন নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রভাব
২০২৫ সালের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য রাজনৈতিক সংকেত বহন করে। ভারতের নির্বাচনী ব্যাকড্রপ, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা—সবই মিশ্রভাবে প্রভাব দেবে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের গতিপথে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প এই ধরনের মন্তব্য ভারতে দায়িত্বশীল বিরোধীদের প্রতি একটি খোলা বার্তা হতে পারে— যে নির্ধারক ভূমিকা নিতে তিনি রাজি। ঐক্য এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দিকেও এটি একটি রাজনৈতিক শর্তাবলী হতে পারে।
কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতা
তবে কেবল মন্তব্যই পর্যাপ্ত নয়। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই দীর্ঘ সময় ধরে বিরোধগুলোর ইতিহাস বহন করছে— সীমান্ত বিবাদ, কাশ্মীর ইস্যু, পারস্পরিক অভিযুক্তি। ট্রাম্পের বক্তব্য যদি পরিস্থিতি বদলাতে চাওয়া হয়, তাহলে কূটনৈতিক উদ্যোগ, আন্তঃদেশীয় আলোচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
একই সঙ্গে, পাকিস্তান ও ভারত উভয়কেই আন্তর্জাতিকভাবে পড়তে হবে— যে সহস্র কোটি মানুষের সুযোগ ও শান্তি তাদের ভিত্তিতে নির্ভর করে দুই দেশের কূটনৈতিক ব্যাবস্থার ওপর।
মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জনাব অশোক মিত্র বলছেন, “ট্রাম্পের এই মন্তব্য কেবল বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, তার অন্তরালে গঠনমূলক প্রস্তাব রয়েছে— যে ভারত ও পাকিস্তান উচিত শান্তিপূর্ণভাবে একত্রে চলা।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. ফারহানা মুত্তাহরা বলেন, “এ ধরনের মন্তব্য কখনো কখনো সেতুবন্ধনসৃষ্টির শুরু হতে পারে। তবে তা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজন বাস্তব কূটনৈতিক উদ্যোগ।”
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি সম্মেলন থেকেই শুরু হয়ে ট্রাম্পের মোদি ও পাকিস্তানের প্রতি প্রশংসাসূচক মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গোল মাতিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে এই ইঙ্গিত ভবিষ্যৎ সম্পর্কের দিক বদলাতে পারে। তবে কেবল বক্তব্য নয়— যদি বাস্তব পদক্ষেপ ও মঞ্চে কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ না চলে, তাহলে এই প্রশংসা কেবল কথার ফোয়ারা হিসেবেই থেকে যাবে।
এম আর এম – ১৭৭৪,Signalbd.com