ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ থেকে সরিয়ে নিলেন। সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অবনমিত স্বাস্থ্যগত কারণে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন ধনখড়। তাঁর এই পদত্যাগ ভারতের রাজনীতিতে এবং সংসদীয় কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
পদত্যাগের কারণ: স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ
উপরাষ্ট্রপতি ধনখড় তাঁর পদত্যাগপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তাঁকে পদত্যাগ করতে হচ্ছে। এই পদত্যাগ অবিলম্বে কার্যকর করার অনুরোধও তিনি রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন।
ধনখড় বলেছিলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। দেশের কল্যাণে এবং নিজস্ব সুস্থতার স্বার্থে পদত্যাগ করাই শ্রেয়।”
উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও সংসদীয় কর্মকাণ্ডে পদত্যাগের প্রভাব
ভারতের সংসদীয় প্রক্রিয়ায় উপরাষ্ট্রপতির রয়েছে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। সোমবার সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হয়। ধনখড় বেলা ১১টায় রাজ্যসভায় উপস্থিত হন এবং সভা শুরু করেন। তবে, বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে কংগ্রেসের সদস্যরা পেহেলগাম-কাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার দাবি জানাতে থাকেন।
ধনখড় বিরোধীদের বক্তব্যের সুযোগ দেন এবং সভার নেতা বিজেপির জেপি নাড্ডাকেও মঞ্চ দেন। কিন্তু হইচই ও অশান্তির কারণে দুপুর ১২টার মধ্যে কার্যক্রম মুলতবি করে সভা ত্যাগ করেন। এরপর আর রাজ্যসভায় হাজির হননি। সন্ধ্যার পর পদত্যাগপত্র পাঠান।
ধনখড়ের রাজনৈতিক জীবন ও পদাধিকার
জগদীপ ধনখড় ২০২২ সালের আগস্টে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি কংগ্রেসের মার্গারেট আলভাকে পরাজিত করে এই পদে আসীন হন। ধনখড়ের মেয়াদ ছিল ২০২৭ সাল পর্যন্ত।
উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে ধনখড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন। তাঁর রাজ্যপাল হিসেবে সময়কালে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে বেশ সাড়া পড়েছিল।
ধনখড়ের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে তাঁর দৃঢ়তা ও স্বচ্ছতার জন্য প্রশংসিত হলেও গত কয়েক মাসে তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল বলে জানা গেছে।
পদত্যাগপত্রে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
পদত্যাগপত্রে ধনখড় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, “উপরাষ্ট্রপতি পদে থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি। সংসদ সদস্যদের উষ্ণতা, আস্থা ও স্নেহ আমার জীবনে চিরদিন অমলিন থাকবে।”
ধনখড় আরও লিখেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করা এবং অংশ নেওয়া তাঁর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় ছিল।
পরবর্তী পদাধিকারী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
ধনখড়ের পদত্যাগের ফলে এখন ভারতের রাজ্যসভার চেয়ারম্যান পদ শূন্য রয়েছে। এই পদ পূরণের জন্য নতুন নির্বাচন বা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদত্যাগ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে। কারণ উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শুধু সাংবিধানিক নয়, অনেক সময় রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্যস্থতাও এই পদ পালন করে থাকে।
স্বাস্থ্য ও উচ্চবয়সের প্রভাব: ভারতের শীর্ষ নেতাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত
ভারতের শীর্ষ রাজনীতিকদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে পদত্যাগের ঘটনা নতুন নয়। রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করাটা অনেক সময় শারীরিক ও মানসিক চাপের সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং পরিপক্ক বয়সের নেতাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। ভারতের সংবিধান ও রাজনৈতিক কাঠামোতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যেন সময়মতো পরিবর্তন ও বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি হয়।
সংক্ষেপে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়: জীবন, কর্ম এবং অবদান
- পুর্ন নাম: জগদীপ ধনখড়
- জন্ম: ১৮ নভেম্বর ১৯৪৯
- পেশা: আইনজীবী, রাজনীতিবিদ
- রাজনৈতিক দল: ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)
- পদাধিকার: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল (২০১৯-২০২২), ভারতের উপরাষ্ট্রপতি (২০২২-২০২৫)
- অবদান: সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা, সংসদীয় decorum বজায় রাখা, রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ।
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগ দেশীয় রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। শারীরিক কারণেই এই পদত্যাগ হলেও এর রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রভাব অনেক গভীর হবে। আগামী দিনগুলোতে উপরাষ্ট্রপতির পদে কে আসেন, সেটাই এখন নজরের কেন্দ্রে।
সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এই খালি পদ পূরণের প্রক্রিয়া শুরু করবে শীঘ্রই। একদিকে সাংবিধানিক দায়িত্বের ব্যতিক্রম ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি, অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি – এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ ভারতের সামনে।



