বিশ্ব

হামাস মুক্তি দিতে শুরু করল ইসরায়েলি জিম্মিদের, প্রথম ধাপে ৭ জন মুক্ত

Advertisement

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বন্দি থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তি দিতে শুরু করেছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। সোমবার সকাল থেকে গাজায় প্রাথমিক ধাপে জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার পর হামাস রেড ক্রসকে সাতজন বন্দি হস্তান্তর করেছে। তবে মুক্ত হওয়া এই ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

এ পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার বা দেশটির সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মুক্ত হওয়া ব্যক্তিরা সুষ্ঠুভাবে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

হামাসের এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজর কেড়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া ও সম্প্রতি ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রেক্ষাপটে এটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি ও শান্তি পরিকল্পনা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুযায়ী গত শুক্রবার গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে

আজ সোমবার মিসরের শহর শারম আল-শেখে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন শুরু হচ্ছে। সেখানে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে চুক্তির অনুমোদন দিতে পারেন।

মুক্তি কার্যক্রমের সময় ইসরায়েলে পৌঁছেছেন ট্রাম্প। সেখানে দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণ দেবার পাশাপাশি মিসরে শারম আল-শেখে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী

গাজায় প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির মূল শর্তগুলো হলো:

  1. গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা বন্ধ
  2. নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাদের সরানো
  3. জিম্মি ও বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।

গত রোববার হামাস ও ইসরায়েল জিম্মিদের মুক্তি বিষয়ে দিনভর তৎপর ছিল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মধ্যস্থতাকারী দেশ এ প্রক্রিয়া তদারকি করছে।

হামাসের ২০২৩ সালের হামলার প্রেক্ষাপট

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা চালায়। হামলার সময় প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করা হয় এবং গাজায় আনা হয়। হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিরুদ্ধে টানা দুই বছর ধরে নৃশংস অভিযান চালায়।

বর্তমানে এই ২৫০ জন বন্দির মধ্যে ২০ জন জীবিত এবং ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় বন্দিদের নিরাপদ হস্তান্তরের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব পেয়েছে।

মুক্তি ও বন্দিবিনিময়

হামাসের এই পদক্ষেপের পর ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ১,৯৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি ফেরত পাবেন। এদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। এছাড়া বন্দিদের মধ্যে ২২ শিশু রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্দি মুক্তির এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র মানবিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার একটি পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই মুক্তি কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য এই ধরনের মানবিক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

মিশর, কাতার এবং ইউরোপীয় দেশগুলো এই প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেড ক্রস (ICRC) এ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের বন্দি মুক্তির এই পদক্ষেপের মাধ্যমে গাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এখনও পুরো এলাকা অস্থির এবং উত্তেজনাপূর্ণ

মিসরে শান্তি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি চুক্তি আরও সম্প্রসারিত হতে পারে। বিশেষ করে, জিম্মি মুক্তি, বন্দিবিনিময় এবং সীমান্তে নিরাপত্তা বিষয়গুলো আলোচনার প্রধান অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মানবিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব

বন্দি মুক্তি প্রক্রিয়া শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। গাজায় বন্দি থাকা মানুষগুলো পরিবার ও সমাজে ফিরে আসার মাধ্যমে মানবিক সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে পারবে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি এবং কূটনৈতিক সমঝোতার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি

গাজা উপত্যকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনও সতর্কতার। গত দুই বছরে চলা সংঘর্ষের ফলে অবকাঠামো ধ্বংস, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বন্দি মুক্তি এই সংকট মোকাবেলায় কিছুটা মানবিক স্বস্তি দেবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা ও তদারকি ছাড়া এই প্রক্রিয়া স্থায়ী শান্তির দিকে অগ্রসর হতে পারবে না।

হামাসের বন্দি মুক্তির এই উদ্যোগ কেবল একটি মানবিক পদক্ষেপ নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুক্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে, ভবিষ্যতে আরও সমঝোতা এবং যুদ্ধবিরতির দিকনির্দেশনা পাওয়া সম্ভব।

মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ ও উত্তেজনা এই ধরণের মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের পথে এগোতে পারে।

MAH – 13298 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button