বিশ্ব

ভারতের ভবিষ্যৎ কি নেপালের মতো হতে পারে? সতর্ক করলেন সঞ্জয় রউত

Advertisement

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি আবারও আলোচনায়। নেপালে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান শুধু দেশটির ক্ষমতাসীনদের নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকেও ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, ভারতেরই এক প্রবীণ রাজনীতিক—শিবসেনা নেতা ও মহারাষ্ট্র থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সঞ্জয় রউত সতর্ক করেছেন, “ভারতেও নেপালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”

তিনি বলেছেন, দুর্নীতি, স্বৈরাচারী শাসন, স্বজনপ্রীতি ও সরকারের ব্যর্থ নীতি যদি চলতেই থাকে, তবে ভারতের সাধারণ মানুষও বিদ্রোহে ফেটে পড়তে পারে।

নেপালের সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান: কেন ক্ষুব্ধ হলো জনতা

গত সপ্তাহে নেপালে ব্যাপক দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের কারণে সাধারণ জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। দিন দিন দারিদ্র্য ও বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

যেখানে জনগণ প্রত্যাশা করেছিল গণতান্ত্রিক সরকার, সেখানে তারা দেখতে পায় দুর্নীতি আর পরিবারতন্ত্র। ঠিক এই কারণেই আন্দোলন রূপ নেয় অভ্যুত্থানে।

সঞ্জয় রউত সেই প্রসঙ্গ টেনে ভারতীয়দের উদ্দেশে সতর্ক করে বলেন—“যদি একই ধারা বজায় থাকে, তবে ভারতও ব্যতিক্রম হবে না।”

সঞ্জয় রউতের সতর্কবার্তা: ভারতের ভবিষ্যৎ কী?

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সঞ্জয় রউত লেখেন:

“নেপালে দুর্নীতি ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যে আগুন জ্বলে উঠেছে, সেই স্ফুলিঙ্গ যদি ভারতে আসে, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভারতের মানুষ এখনো মহাত্মা গান্ধীর অহিংসার দর্শন মেনে চলে বলেই দেশ শান্ত আছে। নরেন্দ্র মোদির সরকারও আসলে গান্ধীর নামেই টিকে আছে।”

রউতের বক্তব্যে স্পষ্ট—ভারতের রাজনীতিকদের এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি নেপালের থেকেও ভয়াবহ হতে পারে।

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

সঞ্জয় রউত সরাসরি মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন:

  • “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছেন। এর মানে কী? এর মানে হলো—দেশে এখনো কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র।”
  • “ভারতের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। কারও সন্তান দুবাইয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে, কেউ সিঙ্গাপুরে ব্যবসা করছে, আবার কেউ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়ে বসে আছে।”
  • “এগুলোই প্রমাণ করে সরকারের অভ্যন্তরে দুর্নীতি ও বৈষম্য কত গভীরে গেঁথে গেছে।”

এ ছাড়া তিনি মোদি সরকারের স্বজনপ্রীতির দিকটিও তুলে ধরেন, যা জনগণের আস্থা নষ্ট করছে বলে অভিযোগ করেন।

মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় সমাজ

ভারত আজও গণতন্ত্রের মূলে দাঁড়িয়ে আছে মহাত্মা গান্ধীর দর্শনে—এমনটাই বিশ্বাস করেন সঞ্জয় রউত।

তিনি বলেন—“ভারত টিকে আছে কেবল গান্ধীজি এখানে জন্মেছিলেন বলেই। মোদি যতই গান্ধীকে অবমাননা করুন না কেন, আসলে তার সরকারও গান্ধীর নামেই টিকে আছে।”

অর্থাৎ, ভারতের সাধারণ মানুষ এখনো অহিংসা ও গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। তবে সেই ধৈর্য যদি একদিন ভেঙে যায়, তবে নেপালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু হবে না।

ভারতের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতি

সঞ্জয় রউত ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকেও ব্যর্থ হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন—“নেপাল একসময় আমাদের বন্ধু ছিল। তারা ভারতকে বড় ভাই মনে করত। কিন্তু নেপালের যখন সংকট তৈরি হলো, ভারত তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এটাই আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা।”

এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিই নয়, বাইরের দেশগুলোর সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।

ভারত কি সত্যিই নেপালের পথে?

এখন প্রশ্ন উঠছে—ভারত কি সত্যিই নেপালের পথে হাঁটছে?

  • অর্থনীতি: ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হলেও আয় বৈষম্য বাড়ছে। কোটি কোটি মানুষ এখনো দারিদ্র্যের শিকার।
  • দুর্নীতি: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতির সূচকে ভারত এখনো অনেক পিছিয়ে।
  • রাজনীতি: বিরোধীদলগুলো অভিযোগ করছে—মোদী সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।
  • মিডিয়া স্বাধীনতা: সমালোচকরা বলছেন, ভারতে মিডিয়ার স্বাধীনতা আগের মতো নেই। নেপালের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ না হলেও অনেক সময় ভিন্নমতকে দমন করা হচ্ছে।

এসব কারণ মিলিয়ে বলা যায়, সঞ্জয় রউতের সতর্কবার্তা অমূলক নয়।

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু গণতন্ত্র শুধু ভোটের মাধ্যমে টিকে থাকে না; টিকে থাকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের আস্থার ওপর।

নেপালের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান ভারতের জন্য একটি সতর্কবার্তা। সঞ্জয় রউত সেই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছেন—“রাজনীতিবিদরা এখনই যদি জনগণের কথা না শোনেন, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”

MAH – 12748,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button