শিক্ষা

রাকসু নির্বাচন: রাবিতে ছাত্রদল-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ, আহত ৩

Advertisement

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার অন্তর্ভুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
৩১ আগস্ট (রবিবার) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত ধস্তাধস্তি এবং সংঘর্ষে রূপ নেয়, যেখানে অন্তত তিনজন আহত হন।

ঘটনার সূচনা

রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে অবস্থান নেয়।
সকাল ১০টার দিকে রাকসু নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়। এ সময় ছাত্রদলের কিছু কর্মী কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুযায়ী, তারা ভেতরে ঢুকে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার ভেঙে ফেলে এবং টেবিল উল্টে দেয়, যেখানে রিটার্নিং কর্মকর্তারা বসে কাজ করছিলেন। এরপর তারা কার্যালয়ের ফটকে তালা মেরে দেয়।

এই সময় ছাত্রদল বিভিন্ন স্লোগান দেয়, যেমন:

  • “জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই করো”
  • “প্রথম বর্ষের ভোটাধিকার, ছাত্রদলের অঙ্গীকার”
  • “রাকসু আমার অধিকার, তুমি কে বাদ দেওয়ার”
  • “প্রথম বর্ষের ভোটাধিকার দিতে হবে, দিতে হবে”

তাদের মূল দাবি ছিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার প্রদান করতে হবে, নতুবা নির্বাচন বৈষম্যমূলক হবে।

ধস্তাধস্তি ও সংঘর্ষ

ছাত্রদল কার্যালয়ে তালা দেওয়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখানে পৌঁছে অবরোধ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং ছাত্রশিবিরের কিছু কর্মীও ছিলেন বলে জানা যায়।
এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে এবং ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রদলের তিনজন নেতা-কর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন—

  • তাহের রহমান (শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক)
  • হাসিম রানা (মতিহার হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি)
  • রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী

ছাত্রদলের অবস্থান

ছাত্রদল দাবি করে, তারা কোনো ভাঙচুর করেনি। শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন:

“আমরা কোনো ভাঙচুর করিনি। শুধু টেবিল সরানো হয়েছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অবস্থান অব্যাহত রাখবো।”

ছাত্রদলের কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বেশ কয়েকজন অধ্যাপকও। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—

  • অধ্যাপক এ. নাঈম ফারুকি (কেন্দ্রীয় কমিটি, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)
  • অধ্যাপক আতাউর রহমান (সহ-প্রচার সম্পাদক)
  • অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বাবু (রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক)
  • অধ্যাপক আব্দুল আলিম (জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি)

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য

রাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলাম বলেন:

“যখন রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন বর্তমান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন না। তাই তাদের ভোটার করার সুযোগ নেই। তারা আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার পাবে।”

এ বক্তব্যের পর ছাত্রদলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। তাদের ভোটাধিকার না দেওয়া অন্যায়।”

ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু নির্বাচন বহু বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়নি। দীর্ঘদিন পর নির্বাচন ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দেয়। তবে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সময় যারা ভর্তি হয়নি, তারা ভোটাধিকার পাবে না—এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অন্যদিকে ছাত্রদলের দাবি, ভর্তি সম্পন্ন হওয়া সকল শিক্ষার্থীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিশ্লেষণ: কেন এত বিতর্ক?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতির অংশ নয়; এটি জাতীয় রাজনীতির সঙ্গেও সম্পর্কিত। রাকসুতে জয়ী হওয়া সংগঠনগুলো ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই প্রতিটি ভোটই গুরুত্বপূর্ণ।
এ কারণে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার দেওয়া হলে নতুন ভোটারদের ভোট পেতে সংগঠনগুলো মরিয়া হয়ে ওঠে।

আহতদের অবস্থা

আহত তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত কেউ নেই বলে জানা গেছে। তবে সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রশাসনের ভূমিকা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকায় বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এখন কী হতে পারে?

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিয়ে ছাত্রদল তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, দাবি মানা না হলে আরও কঠোর আন্দোলন হবে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে। তাই সমাধান না হলে আরও সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।

MAH – 12574,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button