বিশ্ব

নোবেল শান্তি পুরস্কার ‘বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে’: পুতিন

Advertisement

সাম্প্রতিক নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচনা; তাঁর দাবি, শান্তির নামে রাজনীতি চলছে, পুরস্কার হারাচ্ছে বিশ্বাসযোগ্যতা।

পুতিনের মন্তব্য

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আজকাল নোবেল শান্তি পুরস্কার সেইসব লোকদের দেওয়া হচ্ছে, যারা শান্তির জন্য কোনো বাস্তব অবদানই রাখেননি। ফলে এই পুরস্কারের বিশ্বাসযোগ্যতা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।” তাঁর বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পুতিনের এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের মতে, বিশ্বে একাধিক সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার পরও তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, এবারের পুরস্কার পেয়েছেন ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো, যিনি দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকার জন্য সম্মানিত হয়েছেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক

প্রতি বছরই নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে প্রশংসার পাশাপাশি বিতর্কও দেখা যায়। অনেকের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই পুরস্কারের মান ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব, আন্তর্জাতিক স্বার্থ এবং পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত—এসব অভিযোগ বারবার উঠেছে নোবেল কমিটির বিরুদ্ধে।

পুতিনের মন্তব্য এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর ভাষায়, “নোবেল শান্তি পুরস্কারের মূল উদ্দেশ্য ছিল মানবতার কল্যাণে কাজ করা ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এতে পুরস্কারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে পটভূমি

২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণার আগে থেকেই ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি এই পুরস্কারের যোগ্য প্রার্থী। তাঁর দাবি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি সংঘাত নিরসনে ভূমিকা রেখেছেন এবং বিশ্বব্যাপী অন্তত সাতটি যুদ্ধ থামাতে সফল হয়েছেন।

তবে শেষ পর্যন্ত নোবেল কমিটি ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়। ট্রাম্প পুরস্কার না পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও বলা হয়, “নোবেল কমিটি শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছে।” এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ভেনিজুয়েলার নেত্রী মাচাডো কেন পেলেন পুরস্কার

নোবেল কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী, ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাডোকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভূমিকার জন্য। ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে তিনি আন্দোলন করে আসছেন।

নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, “মারিয়া করিনা মাচাডোর নেতৃত্ব ও সাহস গণতন্ত্রের মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারে নতুন প্রেরণা দিয়েছে।” তবে সমালোচকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে। পুতিনের বক্তব্য সেই সমালোচনাকেই আরও জোরদার করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

পুতিনের মন্তব্যে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমা মিডিয়াগুলো একে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য” হিসেবে দেখলেও রাশিয়াপন্থি সংবাদমাধ্যমগুলো মনে করছে, পুতিন বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক আলেক্সি নিকোলাইভ এক মন্তব্যে বলেন, “পুতিনের বক্তব্য কেবল রাশিয়ার অবস্থান নয়, বরং একটি সাধারণ আন্তর্জাতিক উদ্বেগকে প্রতিফলিত করছে। আজকাল নোবেল পুরস্কারগুলি অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কৌশলের অংশে পরিণত হয়েছে।”

অন্যদিকে, মার্কিন বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের এই মন্তব্যের পেছনে ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাজ করছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাস ও বিতর্কের ধারাবাহিকতা

নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯০১ সালে প্রথম দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব শান্তি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রচারে অবদান রাখা ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া। কিন্তু বিগত দুই দশকে একাধিকবার এই পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরই নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। সেই সময়ও অনেকের প্রশ্ন ছিল—“তিনি তখনও কী করেছেন যা তাঁকে শান্তির পুরস্কারের যোগ্য করে তুলেছে?”
এই ধরনের সিদ্ধান্তই বছরের পর বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, যা পুতিনের বক্তব্যকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে।

ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে

পুতিনের মন্তব্য কেবল নোবেল কমিটিকেই নয়, বরং পশ্চিমা রাজনীতিকদেরও চাপে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে নোবেল পুরস্কারের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার দাবি বাড়বে।
বিশ্বজুড়ে শান্তির প্রচেষ্টা এখনো চলমান, কিন্তু যদি পুরস্কার রাজনীতির মঞ্চে পরিণত হয়, তবে তা প্রকৃত শান্তিকর্মীদের প্রাপ্য মর্যাদা কেড়ে নিতে পারে।

অবশ্য অনেকেই বলছেন, বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও নোবেল শান্তি পুরস্কার এখনো বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা। তবে এই মর্যাদা টিকিয়ে রাখতে হলে কমিটিকে নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার মানদণ্ড আরও শক্ত করতে হবে।

পুতিনের বক্তব্য শুধু এক ব্যক্তির ক্ষোভ নয়; এটি নোবেল শান্তি পুরস্কারের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন। বিশ্ব যখন শান্তির পথে এগোতে চায়, তখন শান্তির প্রতীক এই পুরস্কারের প্রতি আস্থা হারানো মানবতার জন্যই এক ধরনের হতাশা।
এখন দেখার বিষয়—নোবেল কমিটি ভবিষ্যতে কীভাবে নিজেদের সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা প্রমাণ করে, আর পুতিনের মতো নেতারা কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে।

এম আর এম – ১৭১৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button