বিশ্ব

সবচেয়ে শক্তিশালী’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন উত্তর কোরিয়ার

Advertisement

ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে নিজেদের সর্বাধুনিক ও ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) প্রদর্শন করেছে উত্তর কোরিয়া। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে আয়োজিত এ কুচকাওয়াজে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন উপস্থিত থেকে এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ‘হোয়াসং-২০’ উন্মোচন করেন।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, এটি দেশটির সামরিক ইতিহাসে সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী পারমাণবিক কৌশলগত অস্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

কিম জং উনের উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক প্রদর্শনী

পিয়ংইয়ংয়ের প্রধান সামরিক মাঠে অনুষ্ঠিত এই কুচকাওয়াজে হাজার হাজার সেনাসদস্য, কৌশলগত ড্রোন, দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত সামরিক যান প্রদর্শন করা হয়। তবে পুরো অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল হোয়াসং-২০ আইসিবিএম, যা প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আনা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র পূর্বের সব সংস্করণের তুলনায় দ্রুত, শক্তিশালী এবং বহনযোগ্য, যা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে।

বিদেশি প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ও কূটনৈতিক বার্তা

এই সামরিক কুচকাওয়াজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের উপ-প্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এবং ভিয়েতনামের নেতা তো লাম উপস্থিত ছিলেন। কেসিএনএ প্রকাশিত ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, তারা সবাই কিম জং উনের পাশে বসে কুচকাওয়াজ উপভোগ করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও চীনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি কিম জং উনের কূটনৈতিক বার্তারই প্রতিফলন, যেখানে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের চাপের মুখে তিন দেশের জোটকে আরও শক্ত করার বার্তা দিচ্ছেন।

নতুন ইঞ্জিন প্রযুক্তি ও অস্ত্রের সক্ষমতা

কয়েক সপ্তাহ আগে উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা নতুন প্রজন্মের সলিড-ফুয়েল রকেট ইঞ্জিন তৈরি করেছে, যা কার্বন ফাইবার প্রযুক্তিতে নির্মিত। এই ইঞ্জিন ১৯৭১ কিলোনিউটন পর্যন্ত শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম — যা দেশটির পূর্ববর্তী যেকোনো রকেট ইঞ্জিনের তুলনায় শক্তিশালী।
‘হোয়াসং-২০’-এ এই ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানিয়েছে কেসিএনএ। ফলে এটি দ্রুত মোতায়েনযোগ্য, সহজে পরিবহনযোগ্য এবং তুলনামূলক কম প্রস্তুতি সময়ের মধ্যে উৎক্ষেপণযোগ্য একটি আইসিবিএমে পরিণত হয়েছে।

কুচকাওয়াজে জনসম্পৃক্ততা ও উচ্ছ্বাস

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, হাজার হাজার নাগরিক ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে রাস্তায় lining করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে উল্লাসে মাতেন যখন ভারী সামরিক যান ও ক্ষেপণাস্ত্র শহরের কেন্দ্র দিয়ে অগ্রসর হয়।
উত্তর কোরিয়ার জনগণকে এই ধরনের প্রদর্শনীর মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের বার্তা দিতে চান কিম জং উন—এমন ধারণাই দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

পারমাণবিক কৌশল ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—যে দেশটি এখন আরও উন্নত এবং কার্যকর পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন ও টোকিও এই পদক্ষেপকে “আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি” হিসেবে বর্ণনা করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা কোরীয় উপদ্বীপের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উত্তর কোরিয়ার এ ধরনের কার্যকলাপ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।”

বিশ্লেষণ: উত্তর কোরিয়ার শক্তি প্রদর্শনের কৌশল

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া আবারও নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পথ বেছে নিয়েছে।
একজন দক্ষিণ কোরীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “কিম জং উন এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছেন যেখানে তিনি শুধু সামরিক শক্তি নয়, কূটনৈতিক ভারসাম্যও প্রদর্শন করতে চাইছেন—রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এরই ইঙ্গিত দেয়।”

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ও আন্তর্জাতিক নজর

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক পর্যবেক্ষকেরা এখন কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছেন এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কবে বাস্তবে পরীক্ষা করা হবে। অনেকের মতে, এটি শুধু একটি প্রদর্শনী নয়—বরং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক আলোচনায় কিম জং উনের দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে, বিশেষত দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার প্রেক্ষাপটে।

উত্তর কোরিয়ার ‘হোয়াসং-২০’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন নিঃসন্দেহে দেশটির সামরিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি যেমন কিম জং উনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রদর্শনের অংশ, তেমনি এটি বৈশ্বিক কূটনৈতিক মঞ্চে তার অবস্থান শক্ত করার প্রচেষ্টা।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—এই শক্তি প্রদর্শন শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করবে, নাকি নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দেবে?

এম আর এম – ১৭১৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button