বানিজ্য

ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠান, ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা, ইরান বাণিজ্য অভিযোগ

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে যুক্ত থাকার অভিযোগে ছয়টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একই সঙ্গে, বিশ্বব্যাপী মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ জব্দ এবং মার্কিন নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির অংশ হিসেবে ইরানের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।

ইরান–ভারত বাণিজ্যে নতুন সংকট: যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রভাব

ভারতের পেট্রোকেমিক্যাল খাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে নিম্নলিখিত ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে:

  • অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড
  • গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেড
  • জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড
  • রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি
  • পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড
  • কাঞ্চন পলিমার্স

এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য যেমন মিথানল, টলুইন ও পলিথিনের বিপুল পরিমাণ কেনাবেচায় জড়িত ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে।

প্রধান অভিযোগ ও আর্থিক পরিমাণের বিশ্লেষণ

বিশেষত অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি লেনদেন করেছে। একইভাবে গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের মিথানল আমদানি করেছে।

জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড টলুইনসহ ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যমানের পণ্য আমদানির অভিযোগ পেয়েছে। রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনার মধ্যে ছিল। পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের মিথানল আমদানি করেছে এবং কাঞ্চন পলিমার্স ১৩ লাখ ডলারের বেশি ইরানি পলিথিন পণ্য কেনার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার ধরণ ও তার প্রভাব

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানদের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হবে। এছাড়াও, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা থাকা সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও একই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

এই পদক্ষেপ ইরানের ‘ছায়া নৌবহর’ এবং মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে, যারা আন্তর্জাতিক বাজারে ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের পরিবহনে সহায়তা করে। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, ইরানের কাছ থেকে এই বাণিজ্যিক রাজস্বের মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করে।

ভারত–ইরান বাণিজ্যের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বর্তমান অবস্থা

ভারত ও ইরানের বাণিজ্য সম্পর্ক দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। বিশেষত তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারত ইরানের উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পুনঃনিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভারত ইরানি তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনে। এই কঠোর অবস্থান ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে, যা ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে বৈশ্বিক জালের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি: ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা

এই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত মূলত ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প একইসাথে জানিয়েছেন, রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে আলাদা ‘দণ্ড’ দেওয়া হবে, যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

ভারতের ছাড়াও তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং ইন্দোনেশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের পরিবহন ও বাণিজ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ পালন করে। এই কঠোর পদক্ষেপের লক্ষ্য ইরানের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করা এবং বিশ্বশান্তি রক্ষায় সহায়তা করা।

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য দপ্তর এই বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ব্যবসায়ী মহল এবং পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন যে, এই নিষেধাজ্ঞা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় কোম্পানিগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ার পর, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস (এসডিএন)’ তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। ট্রাম্প প্রশাসন উল্লেখ করেছে, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য শাস্তি নয়, বরং আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্ক পদক্ষেপ ভারতের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জোরালো প্রভাব ফেলবে। ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা ভারতের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্ব রাজনীতিতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চাপ দেওয়া হলেও, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ভারতকে সচেতনতার সঙ্গে কূটনৈতিক এবং ব্যবসায়িক নীতি গ্রহণ করতে হবে।

 MAH – 12049, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button