
আফগানিস্তান আবারও পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানি বিমান পাকিস্তানের তাফরিদ প্রদেশের সীমান্তবর্তী ডুরান্ড লাইনের কাছে অবস্থিত একটি বেসামরিক বাজারে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে, আফগান রাজধানী কাবুলের আকাশসীমাও পাকিস্তানি বিমান দ্বারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
শুক্রবার এক প্রেসবিবৃতিতে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই হামলাকে “অতীতের তুলনায় এক নজিরবিহীন, সহিংস ও জঘন্য” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ধরনের কার্যক্রমে যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তবে এর দায়শীল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীই হবে।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা আফগানিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের এই ঘটনায় কঠোর নিন্দা জানাই। আমাদের দেশের আকাশসীমা রক্ষা করা আমাদের ন্যায্য অধিকার। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে যদি পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটে, তবে তার দায়ভার পাকিস্তানি বাহিনীকেই বহন করতে হবে।”
মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে যে, ডুরান্ড লাইনের আশেপাশে অবস্থিত বেসামরিক এলাকাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালানো এক অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের পরিপন্থী কাজ। আফগান সেনারা বলেছে, তারা দেশের আকাশসীমা সুরক্ষায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি বজায় রেখেছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত : প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস
ডুরান্ড লাইন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্কিত সীমান্ত। এটি ১৯০১ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকারের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। আফগান পক্ষ সবসময় এই সীমান্তকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়নি। সীমান্তের এই জটিল পরিস্থিতি প্রায়শই সামরিক উত্তেজনা এবং সীমান্ত সংঘর্ষের কারণ হয়ে থাকে।
পাকিস্তানি বিমান দ্বারা সীমান্ত অতিক্রম এবং বেসামরিক এলাকায় হামলা চলতি বছরই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে আফগানিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং স্থানীয় বাজার, বিদ্যালয় ও চিকিৎসা কেন্দ্রে ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে।
ডুরান্ড লাইনের নিকটবর্তী অঞ্চলের মানবিক প্রভাব
ডুরান্ড লাইনের কাছে অবস্থিত বেসামরিক বাজারে হামলা চালানোর ফলে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আফগান সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, বাজারে উপস্থিত ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ এই হামলায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই ধরনের হামলা স্থানীয় অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠন ও সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে আফগান সরকার ইতিমধ্যেই বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আফগানিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা পাকিস্তানকে শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে পুনরায় সংঘাত চরম আঞ্চলিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সামরিক বিশ্লেষকরা যা বলছেন
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে এই ধরনের বিমান হামলা স্থানীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক। তারা বলেছেন, আফগান বাহিনী এখন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে আকাশসীমা রক্ষার জন্য টহল ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, পাকিস্তানি বিমান দ্বারা সীমান্ত লঙ্ঘনের পেছনে কৌশলগত উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তবে আফগান সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় এই ধরনের হামলা প্রতিরোধ করতে চায়।
আফগান সরকারের পদক্ষেপ
আফগান সরকার ইতিমধ্যেই সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার ও স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ভবিষ্যতে দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন হলে তা নিস্পেষণ করা হবে এবং আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সরকারি সূত্র জানায়, সীমান্ত এলাকায় উপস্থিত আফগান সেনারা স্থির এবং মোবাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করেছে। বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বিশেষ সতর্কতা ও নিরাপত্তা প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
পাকিস্তানি বিমান হামলা আফগান-পাকিস্তান সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়াবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
আফগানিস্তান বরাবরই পাকিস্তানের এই ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতায় শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়াবে।
আফগানিস্তান আবারও পাকিস্তানকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বলা হয়েছে, “যদি পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটে, তার দায়ভার পাকিস্তানি বাহিনীর উপরই পড়বে।” ডুরান্ড লাইনের কাছে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা, মানবিক ক্ষতি, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে এটি একটি গুরুতর আঞ্চলিক ইস্যু হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আফগান সরকার আশা করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ সৃষ্টি করে শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করবে। সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার এবং বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষিত রাখার পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
MAH – 13269 I Signalbd.com