
গাজার বিভিন্ন এলাকায় সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ইসরায়েল এক মানবিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা সিটি অঞ্চলে এই কৌশলগত বিরতিতে ক্ষুধা ও মৃত্যু থামানোর লক্ষ্যে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার সুযোগ তৈরি করতে চাওয়া হলেও, বাস্তবে ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত থাকায় সংকট ক্রমশই গভীর হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি, কিন্তু হামলা বন্ধ হচ্ছে না
স্থানীয় সময় রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ১০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ‘মানবিক উদ্দেশ্য’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই ঘোষণার পরও গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রবিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এর আগের দিন অর্থাৎ শনিবার গাজায় সংঘটিত ইসরায়েলি হামলায় ৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪২ জন ছিলেন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক। শুধু তাই নয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধা ও অনাহারে আরও ৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
ত্রাণ অবরোধ ও মানবিক বিপর্যয়
ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর পথে বাধা দিচ্ছে, যার কারণে একটি বিশাল মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্যের তীব্র ঘাটতির কারণে গাজায় ক্রমশ মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো ‘গণহত্যার হাতিয়ার হিসেবে ক্ষুধার ব্যবহার’ বলে অভিহিত করেছে।
ক্ষুধায় মরছে শিশুরা
গাজার হাসপাতালগুলোতে এখন ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে। ক্ষুধার্ত শিশুদের অসুস্থতার মাত্রা এতটাই গভীর যে, অনেকের হাড় পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ গাজায় স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসক নিক মেইনারড বলেন, “গাজায় ক্ষুধার্ত রোগীদের অবস্থা দেখে চিকিৎসকরাও অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন।”
ত্রাণের অভাবে শিশুরা প্রতিদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। অনেক মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় ত্রাণের পথ বন্ধ করে ফিলিস্তিনিদের হত্যার নৃশংস কৌশল অবলম্বন করছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ
বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজার এই মানবিক সংকটের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ত্রাণ সরবরাহ অবিলম্বে নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে এবং সংঘাত অবিলম্বে বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বারবার ইসরায়েলকে ত্রাণ ও চিকিৎসা সরবরাহে বাধা না দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।
তবে বাস্তবে পরিস্থিতি মোটেও সহজ নয়। সামরিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই সংঘাত থেকে দ্রুত উত্তরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিন সেকেন্ডের মধ্যে গাজায় প্রাণহানি বাড়ছে, আর শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গাজার সংকটের পেছনের প্রেক্ষাপট
গাজা অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী সংকট এবং বারবারের সংঘাতের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগত গভীর বিবাদ। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং নিরাপত্তা ও অধিকারের প্রশ্নগুলো এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। তাছাড়া, গাজায় অবরোধের ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ, ত্রাণ ও চিকিৎসার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়ছে।
মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম
গাজায় কাজ করা মানবিক সংস্থাগুলো ত্রাণ বিতরণ এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সুরক্ষা ঝুঁকি ও অবরোধের কারণে তাদের কাজ অনেক সময় ব্যাহত হচ্ছে। এই সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য এবং চাপ ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের প্রতিবেদন
ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা বীরত্বের সঙ্গে গাজার এই সংকটের ছবি তুলে ধরছেন, যা পশ্চিমা মিডিয়ার অনেক অংশে হয়তো পুরোপুরি বা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় না। তারা দাবি করছেন, ইসরায়েল ‘ক্ষুধা’ নামক নির্মম অস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের জীবন শেষ করার চেষ্টা করছে।
যুদ্ধবিরতি, ত্রাণ অবরোধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন
এই সংকটের গভীর বিশ্লেষণ এবং মানবিক পরিস্থিতির ব্যাখ্যার জন্য সিগনালবিডি ডটকম গাজার এই সংকট নিয়ে আরো গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। আমাদের লক্ষ্য হল সঠিক তথ্য পরিবেশন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সচেতন করা এবং গাজার মানুষদের জন্য একটুখানি হলেও সাহায্যের পথ তৈরি করা।