গাজার জন্য ত্রাণ বহনকারী আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী জাহাজবহরকে আটকাতে ইসরায়েলের নৌবাহিনী ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষদের খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহের উদ্দেশ্যে প্রেরিত এই বহর বর্তমানে গাজার উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র ওয়ায়েল নাওয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “ইসরায়েলের নৌবাহিনী আমাদের জাহাজের অগ্রবর্তী অংশ অ্যালমা কে কিছুক্ষণের জন্য আটক করলেও, শেষ পর্যন্ত তারা পুরো বহরকে আটকাতে সক্ষম হয়নি। আমরা গাজার উদ্দেশ্যে এগোতে থাকছি।”
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা: আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীদের ঐক্য
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর একটি জোট। এর মধ্যে রয়েছে:
- ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন
- গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা
- মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা
- সুমুদ নুসানতারা
এই চারটি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় গঠিত ফ্লোটিলা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষদের সহায়তা পৌঁছে দেয়।
গত ৩১ আগস্ট, স্পেনের বন্দর থেকে ৫৫টি জাহাজ ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। জাহাজগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত হয় ৪৪টি দেশের নাগরিক। এই বহর এখন পর্যন্ত গাজার জন্য প্রেরিত ত্রাণবাহী বহরের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
নৌবাহিনীর প্রথম অভিযান: অ্যালমা জাহাজ আটক
ফ্লোটিলার প্রধান জাহাজ অ্যালমা ভূমধ্যসাগরে পৌঁছালে ইসরায়েলের নৌবাহিনী প্রথমে এটিকে আটক করে। তবে, বাকি ৫৪টি জাহাজ গতিরোধ না করে নিজেদের যাত্রা চালিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর নৌবাহিনী অ্যালমাকে ছেড়ে দেয়, কিন্তু একই সময়ের মধ্যে বহরের আরেকটি জাহাজ সাইরিয়াস আটকানো হয়। এ ক্ষেত্রেও বাকি জাহাজগুলো এগিয়ে যেতে থাকে।
ওয়ায়েল নাওয়ার ফেসবুক পোস্টে জানান, “নৌবাহিনী আমাদের বহরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। কিছু সময়ের জন্য জাহাজগুলো একে অপর থেকে দূরে সরে গেলেও, আমরা পুনরায় একত্রিত হতে সক্ষম হয়েছি। শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং মিডিয়ার মনোযোগ
ফ্লোটিলার জাহাজবহরের ওপর ইসরায়েলের নৌবাহিনীর তৎপরতা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা‘র প্রতিনিধিরা জাহাজবহরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের নৌবাহিনী জাহাজ আটকানোর সময় প্রথমেই সেটির যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল। কিছু ঘণ্টা অবস্থানের পর তারা জাহাজ ছেড়ে যায়।
এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন দেশের সরকারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মানবিক সহায়তা পৌঁছানোতে কোনও প্রকার বাধা দিতে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে সমালোচনা করেছে।
ত্রাণ জাহাজের গুরুত্ব
ফ্লোটিলার এই ত্রাণবাহী বহর গাজার মানুষের জন্য জীবনরক্ষাকারী খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। গাজার নেটওয়ার্ক এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছে যাতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে ত্রাণ বিতরণ করা যায়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি অভিযান শুরু হওয়ার পর, গাজার মানুষগুলো ব্যাপক খাদ্য ও ঔষধ সংকটের মধ্যে আছে। সেই কারণে এই ফ্লোটিলার বহরের গুরুত্ব অতুলনীয়।
বহরের সাফল্য এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
ওয়ায়েল নাওয়ার জানান, গাজার উদ্দেশ্যে ফ্লোটিলার জাহাজবহর নিরাপদে এগোচ্ছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজার উপকূলে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া নয়। আমরা গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আন্তর্জাতিক বার্তাও পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের প্রচেষ্টা দেখায় যে মানবিক সাহায্য রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও অটুট থাকে।”
গাজার সংকট: মানবিক দৃষ্টিকোণ
গাজার ২০ লক্ষাধিক মানুষ বর্তমানে খাদ্য, পানি এবং ওষুধের তীব্র অভাবে ভুগছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে গেছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত, এবং শিশু ও বয়স্কদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ফ্লোটিলার এই উদ্যোগ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন রক্ষা এবং অন্তত কিছু স্বস্তি প্রদান করবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যেখানে একদিকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মানবিক সহায়তা প্রদানে ব্যস্ত, সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও পরিস্থিতি মনিটর করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সংযুক্ত রাষ্ট্র, এবং সংলগ্ন মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশগুলো ইতিমধ্যেই গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ত্রাণ জাহাজগুলোর নিরাপদ আগমন এবং বিতরণ গাজার মানুষের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মানবিক বার্তা। এটি আন্তর্জাতিকভাবে মানুষের সহমর্মিতা এবং নৈতিক দায়িত্বকে প্রমাণ করে।”
সংক্ষেপে
- ফ্লোটিলার বহর: ৫৫টি জাহাজ, ৪৪টি দেশের স্বেচ্ছাসেবী।
- প্রধান জাহাজ: অ্যালমা, সহায়ক জাহাজ সাইরিয়াস।
- উদ্দেশ্য: যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষদের খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ।
- ইসরায়েলের চেষ্টার ফলাফল: বহর আটকানো ব্যর্থ।
- বর্তমান অবস্থান: গাজার উপকূলের কাছাকাছি।
- ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: দ্রুত ত্রাণ বিতরণ।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার এই উদ্যোগ মানবতার জয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক চমকপ্রদ উদাহরণ। গাজার মানুষদের জন্য এটি শুধু ত্রাণ নয়, বরং আশা ও মানবিক সমর্থনের প্রতীক।
MAH – 13107 I Signalbd.com



