
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহ্বান জানিয়েছেন। গাজার চলমান সহিংসতা ও ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার জন্য তিনি সরাসরি দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা ও গণহত্যার দায়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিচার দাবি করেছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচ। মঙ্গলবারের অধিবেশনে তিনি বলেন, বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নয়, বরং আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
বিস্তারিত
মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য দেন চিলির প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা নেতানিয়াহুসহ সকল দায়ী ব্যক্তিকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাঠগড়ায় দেখতে চাই।”
তার বক্তব্যে তিনি ন্যায়বিচারের পথ হিসেবে প্রতিশোধ নয় বরং আইনি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বোরিচ বলেন, যন্ত্রণা ঘৃণার জন্ম দেয়, কিন্তু আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত সেই ঘৃণার পরিবর্তে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।
গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নারী, শিশু এবং বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলার অভিযোগ বারবার উঠেছে।
গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। বেশ কয়েকটি দেশ সে পরোয়ানা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও করেছে। তবে এখনো কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
চিলির প্রেসিডেন্টের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার আহ্বানকে স্বাগত জানালেও ইসরাইল সমর্থক গোষ্ঠীগুলো এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে।
নিউইয়র্ক শহরের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলে গ্রেফতারের পক্ষে থাকবেন। এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও জাতিসংঘের মঞ্চে গাজার দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
সংখ্যাগত চিত্র
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ শিশু। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং মানবিক সহায়তার ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে।
গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দেশটির ভেতরে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, চিলির প্রেসিডেন্টের এই দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। এর ফলে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়তে পারে এবং ভবিষ্যতে তার আন্তর্জাতিক সফর সীমিত হয়ে যেতে পারে।
একজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, “যদি আইসিসি-র গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর হয় এবং বিশ্বনেতারা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেন, তাহলে ইসরাইলি নেতৃত্বকে বিচারের মুখোমুখি হতে হতে পারে।”
চিলির প্রেসিডেন্টের বক্তব্য গাজায় ন্যায়বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে বাস্তবে নেতানিয়াহুর বিচার সম্ভব হবে কিনা, তা নির্ভর করছে বিশ্বশক্তিগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যকারিতার ওপর।
এখন প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক মহল কি সত্যিই এক হয়ে গণহত্যার দায়ে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে পারবে, নাকি বিষয়টি কেবল বক্তৃতার মঞ্চেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
এম আর এম – ১৪৯৫,Signalbd.com