অর্থনীতি

উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করল ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

Advertisement

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আজ রোববার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এই বাজেট গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম রাখা হয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ২ জুন বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজেট অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে।

বাজেট অনুমোদনের প্রেক্ষাপট ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবটি মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। অর্থ মন্ত্রণালয় এই বাজেট নিয়ে জনমত সংগ্রহের জন্য গত ১৯ জুন পর্যন্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিকদের মতামত নেন। এতে সাধারণ জনগণ, বিশেষজ্ঞ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।

মতামত সংগ্রহের পর বাজেটের খসড়া চূড়ান্ত করা হয় এবং কিছু সংযোজন-বিয়োজন ও সংশোধন করা হয়। এবার বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আগামী ১ জুলাই থেকে এই বাজেট কার্যকর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এই বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আমরা সামগ্রিকভাবে উন্নত অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যা দেশের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাজেট প্রণয়নে আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি যে, এটি দেশের শিল্প, কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কর ব্যবস্থার উন্নতি এবং বাজেট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

বাজেটের মূল ফোকাস: উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা ও কর ব্যবস্থা

এই বাজেটে সরকারের লক্ষ্য বিশেষভাবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি:

  • কৃষি উন্নয়ন: নতুন প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকায়ন।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: বিদ্যালয় ও হাসপাতালের মান উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ।
  • সামাজিক নিরাপত্তা: দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা ও সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনা।
  • কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা: কর আদায়ে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রসার ও দুর্নীতি মোকাবেলা।
  • শিল্প ও বিনিয়োগ: নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য প্রণোদনা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ।

বাজেট অনুমোদনের গুরুত্ব ও দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোরও এই বাজেটের প্রতি ইতিবাচক মন্তব্য রয়েছে। তারা মনে করে, বাংলাদেশে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে বাজেটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, “বাজেটের এই খসড়া প্রণয়ন সরকারের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা ও দেশের ভৌগোলিক ও সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় করে করা হয়েছে। এটি দেশের টেকসই উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।”

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেই এবারের বাজেটে

একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, এটি করপদ্ধতির স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করার একটি পদক্ষেপ। আগের বছরগুলোর মতো এই সুযোগ না থাকায়, করদাতাদের কর পরিশোধের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।

বাজেট বাস্তবায়ন শুরু: আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর

রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আগামী ১ জুলাই থেকে এই বাজেট কার্যকর হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোকে বাজেট অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের সাথে সমন্বয় বৈঠক শুরু করেছেন যাতে বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও জনগণের প্রত্যাশা

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “বাজেটের মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়াটা খুবই প্রাসঙ্গিক। বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে টেকসই ও স্থিতিশীল রাখা জরুরি।”

সাধারণ জনগণও আশাবাদী, কারণ বাজেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বাড়বে এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হবে।

সিগনালবিডি ডটকমের বিশেষ রিপোর্ট: ভবিষ্যতের বাংলাদেশ

বাংলাদেশ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সময়ের মুখে। শিল্পায়ন, কৃষি আধুনিকায়ন ও শিক্ষার উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে। এই বাজেট সেই অগ্রগতিকে আরও শক্তিশালী করবে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালা ও বাজেট পরিকল্পনা দেশের স্বপ্ন পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button