বিশ্ব

ইসরাইলকে ঠেকাতে মুসলিম জোট, ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠনের আহ্বান পাকিস্তানের

Advertisement

দোহায় অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক সম্মেলন

দোহায় অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক আরব-ইসলামিক সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ইসরাইলের আগ্রাসন ও গাজ্জায় চলমান মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছেন। তিনি জাতিসংঘে ইসরাইলের সদস্যপদ স্থগিতের জন্য আবেদন করেছেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষায় একটি সমন্বিত আরব-ইসলামিক ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

শাহবাজ শরীফ বলেন, “৯ সেপ্টেম্বর দোহায় ইসরাইলের বেপরোয়া ও উসকানিমূলক হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করা। এটি কোনো একক ঘটনা নয়, বরং ইসরাইলের আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রকাশ।”

তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার সরাসরি লঙ্ঘন। “গাজ্জায় গণহত্যামূলক অভিযান চলমান মানবতার জন্য এক বড় ধাক্কা। সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের জীবন বিপন্ন হয়েছে। এই সংঘাতের ক্ষতচিহ্ন বিশ্ব মানবতার জন্য চিরস্থায়ী স্মারক হয়ে থাকবে।”

আরব-ইসলামিক টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রয়োজনীয়তা

শাহবাজ শরীফ সভায় বলেন, “ইসরাইলের আগ্রাসী নকশা প্রতিহত করতে একটি কার্যকরী আরব-ইসলামিক টাস্ক ফোর্স গঠন জরুরি। এটি শুধু রাজনৈতিক সমাধান নয়, বরং মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্যও অপরিহার্য। একই সঙ্গে ওআইসির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি জাতিসংঘে ইসরাইলের সদস্যপদ স্থগিতের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।”

পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অবিলম্বে, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে। জিম্মিদের মুক্তি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়সহ মানবিক সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, “গাজ্জার সমস্ত বেসামরিক নাগরিকের জন্য নিরাপদ, টেকসই এবং নিরপেক্ষ মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। ত্রাণকর্মী, চিকিৎসক, সাংবাদিক এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মীদের নিরাপত্তাও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।”

দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জোরালো আহ্বান

শাহবাজ শরীফ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের মৌলিক নীতি অনুযায়ী অপরিহার্য।”

সম্মেলনে উপস্থিত প্রধান অতিথি ও রাষ্ট্রনায়করা

দোহায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানি সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে অংশ নেন:

  • তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান
  • ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান
  • সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ হুসাইন আল-শারাআ আল-জুলানী
  • সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান
  • সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মানসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান
  • মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি
  • মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম
  • ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি
  • ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস
  • কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ
  • বাহরাইনের রাজার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি শেখ আবদুল্লাহ বিন হামাদ আল খলিফা
  • ওমানের উপপ্রধানমন্ত্রী (প্রতিরক্ষা) সাইয়্যিদ শিহাব বিন তারিক আল-সাঈদ
  • জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয়
  • মরক্কোর রাজা-প্রতিনিধি প্রিন্স মুলাই রাশিদ
  • সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ
  • ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রাশাদ মোহাম্মদ আল-আলিমি
  • সুদানের ট্রানজিশনাল সার্বভৌম কাউন্সিলের প্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরাহান

শাহবাজ শরীফের আহ্বান এবং এই সম্মেলনের উপস্থিতি প্রমাণ করে, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজ্জায় চলমান সংঘাতের ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শিশু, মহিলা ও প্রবীণসহ বহু বেসামরিক নাগরিক এখন খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে ভুগছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই মানবিক সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের তৎপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

তিনি বলেন, “বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই সংকট মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা, ত্রাণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব।”

কূটনৈতিক প্রভাব

দোহায় এই সম্মেলন একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা বহন করেছে। পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, ইরান ও অন্যান্য আরব ও ইসলামিক রাষ্ট্রগুলি ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একক অবস্থান নেয়ার মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সংকেত প্রেরণ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের সম্মেলন এবং ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি শুধু রাজনৈতিক সমাধান নয়, বরং মানবিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনেও সহায়ক হবে।

শাহবাজ শরীফের বার্তা

শাহবাজ শরীফ স্পষ্ট করেছেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু ন্যায় ও মানবতার ভিত্তিতে। গণহত্যা, আগ্রাসন এবং অমানবিক নকশার বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ জরুরি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত দখলদার শক্তিকে আটকানো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় ভূমিকা নেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “ইসরাইলের আগ্রাসন শুধু ফিলিস্তিনের নয়, পুরো মুসলিম ও আরব বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক। তাই সমন্বিত পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক চাপের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য।”

দোহায় অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক সম্মেলন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের আহ্বান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। ইসরাইলের আগ্রাসন ঠেকাতে টাস্ক ফোর্স গঠন, জাতিসংঘের সক্রিয় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন এই অঞ্চলের জন্য অপরিহার্য।

পাকিস্তানসহ বিভিন্ন আরব ও ইসলামিক রাষ্ট্রের নেতৃত্ব একমত, যে শুধু রাজনৈতিক সমাধান নয়, বরং মানবিক সহায়তা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

MAH – 12855  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button