গাজা উপত্যকার সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের অন্তত ২৫ সদস্য নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলার সময় পরিবারের অন্য সদস্যসহ আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন।
হামলা ভোরে সংঘটিত হয় এবং কয়েকটি বাড়িতে সরাসরি বোমা ফেলা হয়। নিহতদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধও রয়েছে। স্থানীয় মানুষ ও জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন, তবে নিরাপত্তা হুমকির কারণে উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে চলছে।
হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট
সাবরা এলাকা ইসরায়েলের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এলাকা, যা দখল এবং ধ্বংস করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত আগস্টের শেষে ইসরায়েলি সেনারা ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে। ভোরে বিমান হামলার মাধ্যমে এই এলাকা লক্ষ্যবস্তু হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমাদের পরিবারকে যেন জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা আটকা পড়েছেন, তাদের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু নিরাপদে পৌঁছানো যায়নি।”
উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া মানুষেরাও ইসরায়েলি ড্রোন হামলার শিকার হচ্ছেন। হামলার ফলে উদ্ধারকর্মীরা বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকাজ চলছে
হামলার পর স্থানীয়রা এবং জরুরি সেবা বিভাগের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অন্তত ৫০ জন আটকা থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একটি উদ্ধারকর্মী জানান, “আমরা হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছি, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে ড্রোন থেকে গুলি চালানো হচ্ছে। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন নিহত হয় এবং শুধু একজন বেঁচে ফিরতে সক্ষম হচ্ছে।”
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ছোট গাড়িতে। আশেপাশে মানুষ ভিড় করছে এবং আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা করছে। এক মা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “আমি আমার সব সন্তানকে হারিয়েছি।”
গাজার সামগ্রিক পরিস্থিতি
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৫,২৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি, প্রায় ১,৬৬,৫৭৫ জন। নিহতদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
সাম্প্রতিক হামলায় গাজার মধ্যাঞ্চলে বুরেইজ শরণার্থী শিবিরেও বিমান হামলা চালানো হয়। এতে চার শিশুসহ সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন। এই হামলা জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত একটি ক্লিনিকের কাছে সংঘটিত হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
হামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ইসরায়েলকে ধ্বংসাত্মক হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, “গাজার সাধারণ মানুষগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের জীবনের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ভঙ্গ।”
জাতিসংঘও সতর্ক করেছে, গাজার মানুষদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছানো অপরিহার্য। তারা ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে সহায়তা করার জন্য তৎপর হয়েছে।
স্থানীয় মানুষের যন্ত্রণার কাহিনী
সাবরা এলাকার একটি পরিবারের এক সদস্য বলেন, “আমরা সাহায্যের জন্য সারা বিশ্বে ডাকছি। ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা আটকা, তাদের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।”
অন্য একজন বলছেন, “প্রতিটি ঘরে একাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। আমাদের সব সন্তান, বাবা-মা এবং আত্মীয়রা মারা গেছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন, আমাদের পাশে দাঁড়ান।”
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যে, হামলার ধ্বংসাবশেষে উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে আবারও ড্রোন হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
গাজা ও সাবরার মানবিক সংকট
সাবরা এলাকা এবং গাজার অন্যান্য অংশে হামলার কারণে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার অভাব দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলো ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে পরিচালনা করছে।
স্থানীয় হাসপাতাল আল-শিফা এবং অন্যান্য হাসপাতালগুলো আশ্রয়স্থল ও ত্রাণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। নিহত ও আহতদের জন্য জরুরি চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তবে উপকরণ ও ওষুধের ঘাটতি বিদ্যমান।
বিশ্বমঞ্চে প্রতিক্রিয়া
অনেক দেশ হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং শান্তি আহ্বান করেছে। মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে হামলার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, বাচ্চা ও নারীরা হতভাগ্যভাবে আহত হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। “#SaveGaza” এবং “#StopTheAttack” হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে মানবিক সহায়তার আহ্বান চলছে।
- গাজার সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের অন্তত ২৫ জন নিহত।
- ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও ৫০ জন আটকা থাকতে পারে।
- গত দুই বছরে গাজায় হামলায় মোট ৬৫,২৮৩ জন নিহত এবং ১,৬৬,৫৭৫ জন আহত।
- বুরেইজ শরণার্থী শিবিরেও হামলায় চার শিশুসহ সাত জন নিহত।
- উদ্ধারকাজ চলাকালীন ড্রোন হামলা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি।
- স্থানীয় মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ ও সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
গাজা এখন মানবিক সংকটের মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। সাধারণ মানুষদের জীবন রক্ষা ও আহতদের চিকিৎসা সরবরাহ করা এখন অত্যন্ত জরুরি।
MAH – 12947 I Signalbd.com



