বিশ্ব

পর্তুগাল স্বীকৃতি দিল ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে

Advertisement

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিল পর্তুগাল। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে এই ঘোষণাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র নীতির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত একটি সময়ে এসেছে যখন গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং মানবিক সংকট বিশ্বব্যাপী আলোচিত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং রাষ্ট্রসমূহ বিভিন্ন সময়ে গাজায় চলমান হিংসা ও নাগরিকদের ওপর আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে।

পর্তুগালের এই পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের জন্যও একটি প্রভাবশালী বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া সহ কিছু প্রভাবশালী দেশও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধারা আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

ফিলিস্তিন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রত্বের দাবি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা এবং এর পরবর্তী সময়ে ফিলিস্তিনিদের ভূমি হারানোর ঘটনা এই সংঘাতের মূল প্রেক্ষাপট। জাতিসংঘ ১৯৭০-এর দশক থেকে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি এবং শান্তি প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রস্তাবনা করেছে।

বর্তমান সময়ে প্রায় ১৩০টির বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। তবে কিছু প্রভাবশালী রাষ্ট্র এখনও স্বীকৃতি প্রদান করেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্তুগালের মতো দেশগুলোর স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আলোচনায় নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিতে পারে।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

গাজা ও পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি ইসরায়েলি সামরিক অভিযান বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অভিযানের ফলে প্রচুর সাধারণ মানুষ আহত বা নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনে সামরিক সহিংসতা বৃদ্ধির কারণে দেশটির নাগরিকদের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং চিকিৎসা সেবা অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের জন্য ন্যায়বিচারের বার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে।

পর্তুগালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

পর্তুগাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রভাবশালী দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপকে “মানবিক দায়িত্ব ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের অংশ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

দেশটির সংসদ ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে স্বীকৃতির প্রক্রিয়াটি সুসংগঠিত এবং স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি নতুন ধারা সূচনা করতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর্তুগালের সিদ্ধান্তের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দেশগুলো সাধারণত এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে কিছু দেশ এখনও এ বিষয়ে সংরক্ষণশীল অবস্থান বজায় রেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্বীকৃতি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আলোচনায় নতুন দিকনির্দেশনা আনতে পারে। এছাড়া, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ফিলিস্তিনের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার ও শান্তি নীতির প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করবে।

ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও স্বীকৃতি অর্জন দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের মাধ্যমে ফিলিস্তিন বৈশ্বিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী অবস্থান পাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সমর্থন বাড়ানোর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জন্য একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের সম্ভাবনা তৈরি করা সম্ভব।

পর্তুগালের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বকে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বার্তা যে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং শান্তি রক্ষা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য দেশও এই ধারা অনুসরণ করলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতে পারে।

MAH – 12903 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button