বিশ্ব

গাজা শহর ‘ভাগাভাগি’ করার পরিকল্পনা ট্রাম্পের কাছে গেছে: ইসরায়েলি মন্ত্রী

ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী এবং রিলিজিয়াস জায়নিস্ট পার্টির নেতা বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনের গাজা শহরকে ‘রিয়েল এস্টেট সম্পদ’ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি জানান, এই পরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনার বিস্তারিত

হিব্রু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তেল আবিবে অনুষ্ঠিত একটি রিয়েল এস্টেট সম্মেলনে স্মোট্রিচ গাজার পুনর্বিন্যাস ও জমি ভাগাভাগির রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “শিল্প পেশাদাররা ইতোমধ্যেই একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করেছেন এবং এটি মার্কিন রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা যাচাই করছি কীভাবে এটি রিয়েল এস্টেট ধন-সম্পদে রূপান্তরিত করা যায়। আমি মজা করছি না।”

স্মোট্রিচ আরও জানান, মার্কিন অংশীদারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধের জন্য আমরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছি। ধ্বংসের পর্যায় ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এখন আমাদের নির্মাণের পরিকল্পনা করতে হবে।”

মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকা

গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তিনি গাজা উপত্যকাকে মার্কিন মালিকানাধীন রাখতে চান। তিনি শহরটিকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘রিভেরা’ হিসেবে রূপান্তরের কথা বলেছেন এবং মার্কিন সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। মার্কিন প্রশাসন গাজা থেকে দশ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনাও নিয়ে কাজ করছে।

৩১ আগস্টের প্রতিবেদনে, মার্কিন প্রশাসনের সূত্র উল্লেখ করেছে, গাজা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করেছে—কমপক্ষে ১০ বছরের জন্য অঞ্চলটিকে আমেরিকার অধীনে রাখা এবং সকল বাসিন্দার অস্থায়ী পুনর্বাসন।

ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েল এই পরিকল্পনাকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে। সূত্রগুলো অনুযায়ী, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর নিয়ে আলোচনা চলছে। স্মোট্রিচ বলেন, এই পদক্ষেপ কৌশলগত এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়া

আরব দেশগুলো এই ধারণাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুতি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিকল্পনাটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি ফিলিস্তিনিদের মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনাকে নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, গাজার পুনর্বিন্যাস ও জনসংখ্যার স্থানান্তর আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ব্যাহত করতে পারে।

বিশ্লেষণ ও মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসরায়েলি পরিকল্পনা এবং মার্কিন অংশগ্রহণ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে আরও নাজুক করে তুলবে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এটিকে ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে। এর প্রভাব ভবিষ্যতে অঞ্চলীয় সংঘাত ও মানবিক সংকটকে প্রভাবিত করতে পারে।

গাজা শহরের পুনর্বিন্যাস ও ‘ভাগাভাগি’ পরিকল্পনা মার্কিন এবং ইসরায়েলি অংশীদারিত্বে প্রণীত হচ্ছে। আরব রাষ্ট্রগুলোর কঠোর বিরোধের মধ্যেও ইসরায়েল পরিকল্পনাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

এম আর এম – ১৪১৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button