বিশ্ব

আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পাশে থাকার আশ্বাস কাতারের

আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদ সম্প্রতি কাতারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাউদ বিন আবদুর রহমান বিন হাসান আল-সানি’র সঙ্গে দোহায় বৈঠক করেছেন। কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় এই বৈঠকের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

বৈঠকে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, সীমান্ত সুরক্ষা, এবং পারস্পরিক স্বার্থের যৌথ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়াও উভয় পক্ষ সামরিক সহযোগিতা ও শিক্ষা বিনিময়, প্রশিক্ষণ, এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতেও গুরুত্বারোপ করেছেন।

আফগান নেতৃত্বের কাতারের প্রতি সহমর্মিতা

বৈঠকে আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাওলানা ইয়াকুব মুজাহিদ কাতারের ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই কঠিন সময়ে আফগান জনগণ এবং ইসলামিক এমিরেটের নেতৃত্ব কাতারের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা তাদের নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য দোয়া করছি।”

তিনি আরও বলেন, “আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কাতারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই এই সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হোক।”

আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য

অন্যদিকে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমীর খান মুত্তাকী একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, “আফগানিস্তান আর কোনোদিন এক শক্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্য অন্য শক্তির বিপক্ষে দাঁড়াবে না। আমাদের নীতি নিরপেক্ষ, আমরা সকল দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আফগানিস্তান এবং কাতারের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কাতার, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দেশ হিসেবে, আফগানিস্তানের সামরিক প্রশিক্ষণ এবং মানবিক সাহায্যে সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়াও, আফগানিস্তানের যুব সমাজের জন্য কাতারে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।

সামরিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা

বৈঠকে দুই পক্ষ সামরিক প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও নিরাপত্তা প্রযুক্তি, এবং সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বিশেষ করে, আফগানিস্তান এবং কাতারের মধ্যে সীমান্ত নজরদারি, তথ্য প্রযুক্তি এবং সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সহযোগিতা শুধু উভয় দেশের নিরাপত্তা বৃদ্ধিই নয়, আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আফগানিস্তান–কাতার সম্পর্কের ঐতিহ্য

আফগানিস্তান এবং কাতারের সম্পর্ক বহু বছরের পুরোনো। বিশেষ করে, শান্তি আলোচনা, হিউম্যানিটারিয়ান সাহায্য এবং শিক্ষা–প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে কাতারের অবদান আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কাতার আফগানিস্তানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল, এবং বিশেষ করে মহিলাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় অবদান রাখছে।

মাওলানা ইয়াকুব মুজাহিদ কাতারের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চাইছেন, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আফগানিস্তানের ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

কাতার সরকার আফগান নেতৃবৃন্দের এই সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। কাতার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণ করবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মূল্যায়ন করছে, কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতায় নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তান ও কাতারের মধ্যে এই ধরনের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বৃহত্তর শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মাওলানা ইয়াকুব মুজাহিদ এবং তার কাতারি সমকক্ষরা আগামী মাসগুলোতে আরও বৈঠক করার পরিকল্পনা করছেন। এই বৈঠকে আরও নির্দিষ্ট প্রকল্প এবং যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হবে।

মাওলানা ইয়াকুব মুজাহিদ বলেন, “আমরা চাই শুধু কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলব না, বরং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সক্রিয় ভূমিকা রাখব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, উভয় দেশের জনগণকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ পরিবেশ প্রদান করা।”

আফগানিস্তান এবং কাতারের এই সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের সম্প্রসারণ শুধু দুই দেশের জন্য নয়, পুরো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আফগান নেতৃত্বের নীতি নিরপেক্ষ অবস্থান, কাতারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তায় সহযোগিতা ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

এই বৈঠকই প্রমাণ করছে যে, আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে প্রস্তুত।

MAH – 12883  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button