গাজায় এবার স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল, নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চলছে

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী মঙ্গলবার ভোর থেকে শহরের উপকণ্ঠে স্থল অভিযান শুরু করেছে। জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন বলেছে, ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থল অভিযান শুরু হওয়ার আগে ইসরায়েলি বাহিনী শহরে বিমান হামলা চালিয়ে বহু বেসামরিক ভবন ধ্বংস করেছিল।
স্থল অভিযানের বিস্তারিত
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে এবং পর্যায়ক্রমে স্থল অভিযান চলবে। গাজার শহরটি হামাসের সর্বশেষ ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা খালি করার চেষ্টা করা হলেও এখন পর্যন্ত নগরীর খুব কম অংশই খালি করা সম্ভব হয়েছে।
স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আল-শিফা ও ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ২৩ ও ১২। এছাড়া আল-আসকা হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে।
গত মাসে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাসকে পরাজিত করে শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হবে। জাতিসংঘ আগেই সতর্ক করেছে, এই পরিকল্পনার কারণে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
গতকাল সোমবার একজন ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ইতিমধ্যেই প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি গাজা নগরী ত্যাগ করেছেন।
মানবিক বিপর্যয় ও প্রভাব
শহরে চলমান স্থল অভিযান ও বিমান হামলায় বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ঘরবাড়ি ধ্বংস, পানিসঙ্কট, বিদ্যুৎ সমস্যা এবং স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা চরম কষ্টে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের অভিযান স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে মানবিক সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড “জাতিগত নিধনের” লক্ষণ বহন করছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক নেতারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, “গাজা জ্বলছে। আমাদের বাহিনী সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে, জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত ও হামাসকে পরাজিত করতে কাজ করছে।”
বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজায় স্থল অভিযান ও বিমান হামলার ফলে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে। শহর ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, মানবিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।
গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান ও নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শান্তি ক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জ উত্থাপন করেছে। ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে এ সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এম আর এম – ১৩৬৮,Signalbd.com