মানুষকে কামড়ালে ভারতে কুকুরের শাস্তি ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’!

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে পথকুকুরের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, কোনো কুকুর যদি মানুষকে উসকানি ছাড়াই কামড়ায়, তবে তার জন্য অপেক্ষা করছে ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’। এই নতুন নির্দেশনা কার্যকর হলে কুকুরকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়, বরং আজীবনের জন্য পশু কেন্দ্রে আটকে রাখা হবে। বিষয়টি নিয়ে ভারতজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
কী বলছে সরকার
উত্তরপ্রদেশ সরকার জানায়, যদি কোনো কুকুর প্রথমবার কাউকে কামড়ায়, তবে তাকে নিকটস্থ পশু জন্ম নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ১০ দিনের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এই সময়ে তার আচরণ খুঁটিয়ে দেখা হবে। এছাড়া যদি জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হয়ে থাকে, তবে তা সম্পন্ন করা হবে।
কিন্তু একই কুকুর দ্বিতীয়বার মানুষকে কামড়ালে, তাকে আর কখনোই রাস্তায় ফিরতে দেওয়া হবে না। আজীবনের জন্য পশু কেন্দ্রে বন্দি করে রাখা হবে। সহজ কথায়, কুকুরটির শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
পশু কেন্দ্রে ‘যাবজ্জীবন’ থেকে মুক্তির শর্ত
তবে এই কঠোর নিয়মের মধ্যেও রয়েছে ব্যতিক্রম। কোনো ব্যক্তি যদি এমন কুকুরকে দত্তক নিতে রাজি হন এবং হলফনামা দিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন যে কুকুরটিকে আর কখনো রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হবে না, তবে কুকুরটির মুক্তি সম্ভব। অর্থাৎ, মানুষের দায়িত্বশীল দত্তকই হতে পারে একমাত্র পরিত্রাণের পথ।
পটভূমি: কেন এ সিদ্ধান্ত
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পথকুকুরের আক্রমণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। প্রায়ই দেখা যায়, শিশু থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারী পর্যন্ত কুকুরের কামড়ে আহত হচ্ছেন। অনেক সময় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে জলাতঙ্কের কারণে। উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি কয়েকটি বড় ধরনের কুকুরের আক্রমণের ঘটনা ঘটায় রাজ্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
প্রতিক্রিয়া: বিতর্কের ঝড়
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, সিদ্ধান্তটি জননিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়। একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, রাস্তায় বের হলে হঠাৎ কুকুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই এ ধরনের নিয়ম সাধারণ নাগরিকের জন্য স্বস্তির খবর।
অন্যদিকে, পশু অধিকারকর্মীরা বিষয়টিকে মানবিকতার অভাব বলে উল্লেখ করছেন। তাদের মতে, কুকুরও জীবন্ত প্রাণী, তাদের আজীবন বন্দি করে রাখা অমানবিক। তারা দাবি করছেন, কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতাই হতে পারে সমস্যার সমাধান, কঠোর শাস্তি নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
পশুচিকিৎসকরা বলছেন, মূল সমস্যার সমাধান কেবল কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণে। শহর ও গ্রামে নির্বিচারে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে চলায় সংঘাতও বাড়ছে। অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, সরকারের উচিত হবে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাড়ানো এবং পশুপালনে মানুষকে আরও দায়িত্বশীল হতে উৎসাহিত করা।
অন্যদিকে, সমাজবিদরা বলছেন, মানুষের নিরাপত্তা অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গেলে পশু অধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন, যাতে সমাধান হয় ভারসাম্যপূর্ণ।
আগে কী ছিল, এখন কী বদলালো
আগে ভারতে কুকুর কামড়ালে সাধারণত ভুক্তভোগীকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিতে হতো এবং স্থানীয় প্রশাসন কুকুরটিকে কিছুদিনের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখত। তবে বারবার আক্রমণের ঘটনায় এবার আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হলো। ‘যাবজ্জীবন বন্দি’ প্রথা যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আইন আরও কঠোর হলো।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন কার্যকর করাই আসল চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ, প্রতিটি কামড়ের ঘটনা নথিভুক্ত করা, কুকুরকে শনাক্ত করা এবং পশু কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া বাস্তবে সহজ কাজ নয়। মাইক্রোচিপ বসানো ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কুকুরের পরিচয় শনাক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তবে তা সফলভাবে চালানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সারসংক্ষেপ
ভারতের উত্তরপ্রদেশে পথকুকুরের বিরুদ্ধে নেওয়া এই কঠোর সিদ্ধান্ত জননিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে অনেকে মনে করছেন। তবে একই সঙ্গে পশু অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও জোরালো হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই আইন কার্যকর হওয়ার পর এর প্রভাব কেমন হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ১৩৬৪,Signalbd.com