তুরস্ক কাতারের পাশে সবসময় থাকবে: এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান কাতারের প্রতি তাদের অটুট সমর্থন ঘোষণা করেছেন। তিনি দোহায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (OIC) ও আরব লীগের যৌথ জরুরি সম্মেলনে অংশ নিয়ে বলেন, “তুরস্ক সর্বদা কাতারের পাশে থাকবে এবং বন্ধু ও মিত্র দেশের ভূমিকা পালন করবে।” এরদোগান কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-সানিকে তার প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের জন্য প্রশংসা করেন এবং ইসরাইলি হামলার প্রেক্ষিতে এই সম্মেলন আয়োজনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আখ্যা দেন।
এরদোগান বলেন, “কাতারে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা আমির শেখ তামিমের দৃঢ় ও প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বের মাধ্যমে মর্যাদার সঙ্গে মোকাবিলা করা হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় কাতারের ভূমিকাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথাযথভাবে মূল্যায়ন করছে।”
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, দোহায় এই বৈঠকের আয়োজন কেবল কাতারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ নয়, এটি মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়ারও প্রতীক। তিনি বলেন, “আজকের বৈঠকে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হবে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে কাতারের প্রতি আমাদের হৃদয়ের অনুভূতি প্রকাশ করবে।”
ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা
এরদোগান কাতারে সাম্প্রতিক ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “ইসরাইলের এই হামলা কাতারের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকাকেই লক্ষ্য করেছে। এটি ইসরাইলের দস্যুতার নতুন মাত্রা।” তিনি হামলায় শহীদ হওয়া ফিলিস্তিনি ও কাতারি পুলিশের জন্য দোয়া করেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
তিনি আরও বলেন, “কাতারের ভূমিকা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভূমিকাকে কোনওভাবেই অবমূল্যায়ন করা যায় না।” এরদোগানের এই মন্তব্য কাতারের আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের প্রতি তাদের অটুট সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বদের উপস্থিতি
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-সানি-এর আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে অংশ নেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রধানরা। উপস্থিত ছিলেন:
- ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান
- পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ
- সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ হুসাইন আল-শারাআ আল-জুলানী
- সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান
- সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মানসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান
- মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি
- মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম
- ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি
- ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস
- কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ
- বাহরাইনের রাজার প্রতিনিধি শেখ আবদুল্লাহ বিন হামাদ আল খলিফা
- ওমানের উপপ্রধানমন্ত্রী (প্রতিরক্ষা) সাইয়্যিদ শিহাব বিন তারিক আল সাঈদ
- জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয়
- মরক্কোর রাজা-প্রতিনিধি প্রিন্স মুলাই রাশিদ
- সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ
- ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রাশাদ মোহাম্মদ আল-আলিমি
- সুদানের ট্রানজিশনাল সার্বভৌম কাউন্সিলের প্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরাহান
তুরস্কের প্রতিনিধি দল
এরদোগানের সঙ্গে ছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান, গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিন এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের প্রতিনিধি দল কাতারের প্রতি তাদের সমর্থন এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করে।
কাতারের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা
কাতারের এই সংকটে মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। কাতার ফিলিস্তিনি ইস্যুতে শান্তি স্থাপন এবং মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে নিরলস ভূমিকা পালন করছে। এরদোগানের মন্তব্য অনুযায়ী, এই ভূমিকা ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার পরও অটল রয়েছে। তিনি বলেন, “কাতারের শান্তিচিন্তক ভূমিকা ধ্বংস করা সম্ভব নয়। এটি মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্ব সম্প্রদায়ও কাতারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কাতারের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দোহায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন কেবল সংকট মোকাবিলার নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য প্রদর্শনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এরদোগানের শক্তিশালী বক্তব্য এবং কাতারের প্রতি অটল সমর্থন মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সম্মেলনের পর কাতার একাধিক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি।
- মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি স্থাপনে কূটনৈতিক উদ্যোগ শক্তিশালী করা।
- মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি।
এরদোগানের উপস্থিতি এবং সমর্থন এই পরিকল্পনাকে আরও শক্তিশালী করবে।
এসময় এরদোগান সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে একটি বার্তা দেন: “বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তুরস্ক সবসময় কাতারের পাশে থাকবে।” তাঁর এই মন্তব্য কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের একটি শক্তিশালী প্রতীক।
দোহায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন এবং এরদোগানের বক্তব্য কাতারের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্বকে আরও বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বমঞ্চে মুসলিম বিশ্বের একতা, শান্তি ও সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার নতুন দিক প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
MAH – 12853 Signalbd.com