জাতীয়

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৪৪

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও তিনজন, নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪৪ জন রোগী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সতর্ক বার্তা দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

‍ডেঙ্গুতে প্রাণহানি অব্যাহত, ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের মৃত্যু

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও তিনজন। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪৪ জন নতুন রোগী। এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মৃত তিনজনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ ও ৩০ জন নারী।

‍বিভাগওয়ারি ভর্তি রোগীর পরিসংখ্যান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যে ৪৪৪ জন ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৭ জন ভর্তি হয়েছেন বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে।

এছাড়া ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১২১ জন, ঢাকা বিভাগের (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে) ৬৮ জন, চট্টগ্রামে ৫১ জন, খুলনায় ৩৩ জন, রাজশাহীতে ২৯ জন, ময়মনসিংহে ৮ জন, রংপুরে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ২ জন।

এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, ঢাকার পাশাপাশি বরিশালেও ডেঙ্গুর প্রভাব অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

‍চলতি বছরের ডেঙ্গু চিত্র: পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ

২০২৫ সালের শুরু থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৮ হাজার ২৬ জন। এর মধ্যে প্রায় ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ রোগী পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।

এ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৬ হাজার ৬২৯ জন। অন্যদিকে, ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী প্রাণ হারিয়েছেন, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের তুলনায় এই সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমের পুরোটা এখনো পার হয়নি। তাই আরও বড় মাত্রার সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।

২০২৩ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহতা

২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল রেকর্ড সংখ্যক ১,৭০৫ জনের। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

২০২৪ সালে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকলেও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ১ লাখ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে, তবে নগর এলাকায় পানি নিষ্কাশনের সমস্যা, মশা নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা ও জনসচেতনতার অভাব এ রোগকে বাড়তে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা ও করণীয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নাগরিকদের প্রতি বারবার সতর্কতা জারি করছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতাই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার।

বাসা-বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি অপসারণ, ফুলের টব, ড্রাম, পরিত্যক্ত পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার এবং জ্বর দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া—এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ কতটা কার্যকর?

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন নগর কর্তৃপক্ষ মশক নিধনে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই কর্মসূচিগুলো কতটা কার্যকর?

বেশ কিছু এলাকায় দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত ফগিং বা লার্ভিসাইড ছিটানো হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। নাগরিকরা অভিযোগ করছেন, অনেক সময় একাধিক এলাকাকে উপেক্ষা করে দায়সারা অভিযান চালানো হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলে কোনো কর্মসূচি-ই কার্যকর হবে না।

‍বিশেষজ্ঞ মতামত: সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সিটি করপোরেশন নয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শামীম আহমেদ বলেন, “প্রতিটি পরিবারকে নিজ দায়িত্বে বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম মনিটরিং করতে হবে যেন তা বাস্তবসম্মত হয়।”

তিনি আরও বলেন, “গণসচেতনতা ছাড়া এই রোগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”

সারসংক্ষেপ  

ডেঙ্গু এখন আর শুধু একটি মৌসুমি রোগ নয়, এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রূপ নিচ্ছে। প্রতি বছর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, যা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

জনসচেতনতা, কার্যকর মশক নিধন, প্রশাসনিক আন্তরিকতা এবং চিকিৎসা সেবার সমন্বয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই সমন্বিত উদ্যোগ কি সময়মতো নেওয়া হচ্ছে?

এম আর এম – ০৪৬৬  , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button