বিশ্ব

কাতারে ইসরায়েলি হামলা: বন্দিবিনিময় আলোচনা স্থগিতের ঘোষণা হামাসের

ইসরায়েলের হামলা ও বন্দিবিনিময় আলোচনার স্থগিত

সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা চালায়, যেখানে ফিলিস্তিনের ইসলামিক প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বন্দিবিনিময় ও যুদ্ধবিরতি আলোচনা করছিলেন। এই হামলায় হামাসের কয়েকজন সদস্য ও একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। যদিও হামাসের শীর্ষ নেতারা প্রাণে রক্ষা পান, তাদের অবস্থানকারী আবাসিক সংস্থা ও সুরক্ষা অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কাতার সরকার ইসরায়েলকে “কাপুরুষোচিত” ও “শান্তিপূর্ণ আলোচনার নাশকতা” করার অভিযোগে কঠোর সমালোচনা করেছে। হামাসও ঘোষণা দিয়েছে, এই হামলার পর বন্দিবিনিময় আলোচনা স্থগিত রাখা হয়েছে এবং তারা বলেছে, মধ্যস্থতার জন্য নির্ধারিত স্থানেই যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে কোনো আলাপ আলোচনা সম্ভব নয়।

আরব-ইসলামিক বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক চাপ

কাতারের আহ্বানে প্রায় ৫০টি আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে একটি জরুরি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং বলা হয়, এই ধরনের হামলা শুধু শান্তিপ্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং মধ্যস্থতার নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি আস্থা নষ্ট করছে।

অনেক রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিয়ো কাতারকে শান্তি আলোচনায় সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাই, তবে বিকল্প পথও থাকতে পারে।” তিনি সতর্ক করেছেন যে আলোচনার জন্য সময় সীমিত, এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর অবস্থান

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, হামাসের নেতাদের অবস্থান যেখানেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার যুক্তি, হামাস বিভিন্ন দেশে অবৈধ অফিস ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ: বাধা ও সম্ভাবনা

বাধাসমূহ:

  • নিরাপত্তার সংকট: হামাসের দাবি, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আলোচনার দরজা খোলা থাকবে না। দোহায় হামলার পুনরাবৃত্তি বিশ্বস্ততার সংকট সৃষ্টি করেছে।
  • আন্তর্জাতিক আইন ও সার্বভৌমত্ব: অন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন শান্তি মধ্যস্থতার ভূমিকাকে দুর্বল করে।
  • মানবিক সংকট: গাজায় সাধারণ মানুষের দুরবস্থা তীব্র, যুদ্ধবিরতি ছাড়া পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
  • রাজনৈতিক দ্বিধা: অনেক আরব-ইসলামিক রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, সরাসরি মোকাবিলায় অনীহা রয়েছে।
  • কাতার যদি নিরাপত্তার গ্যারান্টি পায়, তবে মধ্যস্থতা অব্যাহত রাখা সম্ভব।
  • আন্তর্জাতিক চাপ ও ন্যায্য বিচারের দাবি বাড়ছে, যা শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
  • ছোট ধাপে বন্দি মুক্তি, মানবিক অবস্থা উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সমঝোতা চুক্তি হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।

কাতারে ইসরায়েলের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। বন্দিবিনিময় আলোচনা স্থগিত, আরব-ইসলামিক প্রতিক্রিয়া তীব্র, এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আগামী দিনগুলো নির্ধারণ করবে শান্তির পথ এখনও খোলা আছে কি না, নাকি নতুন উত্তেজনা ও সংঘর্ষের সম্ভাবনা আরও বাড়বে।

MAH – 12849  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button