বিশ্ব

ইসরায়েলি হামলা সত্ত্বেও মধ্যস্থতা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা কাতারের

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা এবং দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে পরিচালিত আক্রমণ সত্ত্বেও কাতার যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা থেকে পিছু হটবে না। রোববার আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আল-থানি এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, আর ইসরায়েলি হামলা এ প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে পারবে না।

কাতারের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

শেখ মোহাম্মদ আল-থানি বৈঠকে স্পষ্ট করে বলেন, দোহায় হামলা মূলত মধ্যস্থতার নীতির ওপর আঘাত। তিনি হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং জানান, যে কোনো হুমকি উপেক্ষা করেই যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা চালানো হবে। তার মতে, শান্তি প্রক্রিয়া থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সফল হবে না।

তিনি আরও বলেন, “কাতার মানবিক সংকট কমাতে, বেসামরিক জনগণকে রক্ষা করতে এবং গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই ভূমিকা থেকে আমাদের সরানো যাবে না।”

গত সপ্তাহে ইসরায়েল কাতারে বিমান হামলা চালায়। হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে পরিচালিত সেই হামলায় একাধিক ব্যক্তি নিহত হন, যদিও সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব বেঁচে যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরব ও মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ইতিপূর্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য কাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের সঙ্গে যৌথভাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা একাধিকবার অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে কাতারের ওপর আন্তর্জাতিক আস্থা তৈরি হয়েছে, যা ইসরায়েলি হামলার পর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের প্রেক্ষাপট

রোববার দোহায় জরুরি আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করা হয়। সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানান এবং কাতারের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা ঘোষণা দেন, দোহা যে কোনো শান্তি উদ্যোগ নিলে তা সমর্থন করবে।

একজন অংশগ্রহণকারী মন্ত্রী বলেন, “ইসরায়েলি হামলা শুধু কাতারের বিরুদ্ধে নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে আঘাত।”

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

কাতারের ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এ ঘোষণা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থনকে আরও দৃঢ় করবে। পাশাপাশি ইসরায়েলের ওপর চাপ বৃদ্ধি করবে।

তবে অন্যদিকে ইসরায়েলি সরকার বলছে, হামাসকে দুর্বল করতেই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাদের মতে, মধ্যস্থতার নামে কাতার হামাসকে সুবিধা দিয়ে আসছে। ফলে ভবিষ্যতের আলোচনায় ইসরায়েল হয়তো আরও কঠিন অবস্থান নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, কাতারের ভূমিকা এখন শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাদের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, ইসরায়েল যদি কাতারের প্রচেষ্টা ব্যাহত করার চেষ্টা চালায়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যে আরও অস্থিতিশীলতা ডেকে আনবে।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “মধ্যস্থতার মাধ্যমে কাতার আসলে গাজার জনগণের জন্য মানবিক করিডোর তৈরির চেষ্টা করছে। এই প্রচেষ্টা বন্ধ হলে মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়বে।”

ইসরায়েলের হামলা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় কাতারের অঙ্গীকার স্পষ্ট করেছে যে তারা পিছু হটবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন দোহা, কায়রো ও ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় গাজার ভবিষ্যৎ কতটা বদলাবে, সেটিই দেখার বিষয়। শান্তি প্রক্রিয়া কতদূর এগোবে, তা নির্ভর করছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।

এম আর এম – ১৩৪১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button