বিশ্ব

কাতারে হামলার জেরে দুবাই এয়ার শোতে নিষিদ্ধ ইসরাইল

সংযুক্ত আরব আমিরাত চলতি বছরের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ও বিমান প্রদর্শনী দুবাই এয়ার শো থেকে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে। কাতারে সম্প্রতি চালানো ইসরাইলের বিমান হামলার জেরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছে বিশ্লেষকরা।

ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা

আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত দুবাইতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এয়ার শো, যেখানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি বড় বিমান ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। তবে এবারের আসরে কোনো ইসরাইলি কোম্পানি উপস্থিত থাকতে পারবে না। আমিরাতের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণকারীরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত সরাসরি কাতারে ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছে।

দোহায় ইসরাইলি বিমান হামলা

গত ৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে কাতারের রাজধানী দোহায় একাধিক আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। হামলার লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক নেতারা। যদিও হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল-হাইয়া অক্ষত ছিলেন, তবে তার ছেলে হুমাম ও এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী নিহত হন।

এই হামলার ফলে কাতারসহ সমগ্র আরব বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। আমিরাতও সেই নিন্দার অংশীদার হয়ে ইসরাইলি পদক্ষেপকে কাপুরুষোচিত ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক বলে আখ্যা দেয়।

আমিরাতের প্রতিক্রিয়া ও সংহতি প্রকাশ

আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সব উদ্যোগে পাশে থাকবে।” হামলার পরদিনই আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ বিন জায়েদ দোহা সফর করেন এবং কাতারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

এই সফরের সময়ই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয় যে, আসন্ন দুবাই এয়ার শোতে কোনো ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে না।

দুবাই এয়ার শো: ইতিহাস ও গুরুত্ব

১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো দুবাই এয়ার শো আয়োজন করা হয়। শুরুতে ২০০ প্রতিষ্ঠান ও ২৫টি বিমান প্রদর্শনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম বড় প্রতিরক্ষা ও বিমান প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে।

এবারের আয়োজনকে ঘিরে রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ৯৮টি দেশ থেকে এক হাজার ৪০০-রও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে, প্রদর্শিত হবে ১৯২টি বিমান। দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকার আশা করা হচ্ছে অন্তত এক লাখ ৩৫ হাজার মানুষের।

এই প্রদর্শনীতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া এবং এশিয়ার শীর্ষ প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উপস্থিত থাকবে। ইসরাইলের অনুপস্থিতি তাই এবারের শোতে বিশেষ দৃষ্টিগোচর হবে।

আব্রাহাম চুক্তি ও ইসরাইল-আমিরাত সম্পর্কের পরিবর্তন

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মাধ্যমে ইসরাইল ও আমিরাতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানগুলো দুবাই এয়ার শোতে অংশ নেয়।

তবে কাতারে হামলার পর এই সম্পর্ক নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন আরব দেশগুলোর সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ককে নড়বড়ে করে তুলছে।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

কাতারে ইসরাইলি হামলা শুধু আরব বিশ্বেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমালোচিত হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।

অন্যদিকে, আমিরাতের নেওয়া নিষিদ্ধকরণ সিদ্ধান্তকে অনেকেই সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কারণ এটি শুধু কাতারের প্রতি সংহতির প্রতীক নয়, বরং ইসরাইলের ওপরও কূটনৈতিক চাপ তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুবাই এয়ার শো থেকে ইসরাইলকে বাদ দেওয়া প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব বড় প্রভাব ফেলবে না। তবে এর কূটনৈতিক গুরুত্ব বিশাল।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. মাহমুদ আল করিম বলেন, “এই সিদ্ধান্ত মূলত বার্তা দিচ্ছে যে, আরব দেশগুলো এখন আর একতরফাভাবে ইসরাইলের আগ্রাসন মেনে নেবে না। বরং সমষ্টিগতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত।”

কী হতে পারে

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি আরও জটিল হতে পারে। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা অন্যান্য আরব দেশগুলোও এখন নতুন করে ভাবতে বাধ্য হতে পারে।

প্রশ্ন উঠছে, আমিরাতের এই সিদ্ধান্ত কি শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ, নাকি ভবিষ্যতে ইসরাইল-আমিরাত সম্পর্ক ভেঙে পড়ার সূচনা?

এম আর এম – ১৩১৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button