শিবসেনা নেতার সতর্কতা: ‘পরিস্থিতি ভালো না, ভারতে আগুন জ্বলে উঠতে পারে’

ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) নেতা এবং সাংসদ সঞ্জয় রাউত সতর্ক করেছেন, প্রতিবেশী দেশ নেপালের মতো ভারতেও যে কোনো সময় বিস্ফোরক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তিনি বলেছেন, “পরিস্থিতি ভালো না, ভারতে আগুন জ্বলে উঠতে পারে।” তবে তার মতে, এখন পর্যন্ত সহিংসতা না হওয়ার মূল কারণ হলো ভারতের জনগণ মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আদর্শে বিশ্বাস রাখে।
সঞ্জয় রাউতের বক্তব্য
বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সঞ্জয় রাউত বলেন, নেপালে দুর্নীতি, একনায়কতন্ত্র ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা ভারতের জন্য সতর্ক সংকেত। তিনি দাবি করেন, নেপালের মতোই ভারতেও বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে।
তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকেও ইঙ্গিত ছিল। তিনি বলেন, “মোদিজি যতই গান্ধীকে আক্রমণ করুন না কেন, আজ আপনার সরকার টিকে আছে কেবল গান্ধীর আদর্শের কারণেই।”
নেপালের প্রেক্ষাপট ও ভারতের সঙ্গে তুলনা
সম্প্রতি নেপালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। সঞ্জয় রাউতের মতে, সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ ভারতের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, কারণ সমস্যাগুলো প্রায় একই রকম।
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “ভারতে ৮০ কোটি মানুষ বিনামূল্যে রেশন পায়। এর মানে হলো দারিদ্র্য এখনো ব্যাপক। নেপালেও একই চিত্র দেখা গেছে। ভারতের বিপুল সম্পদ বিদেশে পাচার হচ্ছে, অথচ সাধারণ মানুষ সংগ্রামে দিন কাটাচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সমালোচনা
সঞ্জয় রাউত অভিযোগ করেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, একসময় নেপাল ভারতকে বড় ভাই হিসেবে দেখত, কিন্তু সাম্প্রতিক সংকটে ভারত তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
এছাড়া তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ভারতের তরুণ প্রজন্ম আজ বেকারত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। তারা চুপ করে দেখছে, কিন্তু এই নীরবতা দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে।”
রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
সঞ্জয় রাউতের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বিরোধী দলগুলো তার মন্তব্যকে সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা মনে করছেন, এই ধরনের মন্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিরতা বাড়ানোর চেষ্টা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সতর্কতা শুধুই শিবসেনার অবস্থান নয়, বরং ভারতের বৃহত্তর জনগণের অসন্তোষকেও প্রতিফলিত করছে।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
অর্থনীতি ও রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, সঞ্জয় রাউতের মন্তব্য একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। ভারতের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আসলেই নতুন অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “ভারতের সমাজ এখন টানটান উত্তেজনার মধ্যে আছে। সরকার যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রতিবাদ দেখা দিতে পারে।”
“যদি এই স্ফুলিঙ্গ ভারতে আসে, তবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তবে আজও ভারত টিকে আছে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের কারণে।” — সঞ্জয় রাউত, শিবসেনা নেতা
শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের এই সতর্কবার্তা ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। নেপালের অস্থিরতার সঙ্গে ভারতের তুলনা টেনে তিনি যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা অনেকের কাছেই বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন হলো, ভারতের জনগণ কবে পর্যন্ত ধৈর্য ধরে থাকবে? পরিস্থিতি কি নেপালের মতো বিস্ফোরিত হবে, নাকি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবে? সময়ই হয়তো সেই উত্তর দেবে।
এম আর এম – ১২৭৪,Signalbd.com