আঞ্চলিক

গোপালগঞ্জে রাত থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ

গোপালগঞ্জে টানটান উত্তেজনার মাঝে রাত ৮টা থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি – গণসমাবেশ ঘিরে সহিংসতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কারফিউ জারি, মাঠে সেনাবাহিনী-বিজিবি-পুলিশ

কী ঘটেছে গোপালগঞ্জে?

মঙ্গলবার বিকেলে এনসিপি-র পূর্ব ঘোষিত একটি সমাবেশ ছিল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায়। সমাবেশ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই একটি বিক্ষোভ মিছিলের ওপর অতর্কিতে হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২ জন, এ তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সূত্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা, ছোড়ে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড।

এরপর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় উত্তেজনা, রাস্তা অবরোধ, মিছিল এবং sporadic সংঘর্ষ। রাত নামতেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।

কারফিউ জারির ঘোষণা এবং মেয়াদ

সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে রাত ৭টার দিকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়:
“গোপালগঞ্জে আজ রাত ৮টা থেকে আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।”

এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জেলার সব প্রকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসন থেকে মাইকিং করে বাসিন্দাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

প্রশাসনের অবস্থান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

জেলা প্রশাসন জানায়, কারফিউ চলাকালীন সময়ে কাউকে রাস্তায় দেখা গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে চার প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন—
“জীবন-মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি না হলে কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।”

ঘটনার পেছনের পটভূমি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এনসিপি বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করে আসছিল। গোপালগঞ্জেও বড় সমাবেশের প্রস্তুতি ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব সমাবেশের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হচ্ছিল। এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেন,
“আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়েছে। তারা চায় না আমরা গণমানুষের কথা বলি।”

উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, ফলে রাজনৈতিক উত্তেজনা আগেই অনুমেয় ছিল।

রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মতামত

একদিকে এনসিপি-র পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতেই এসব হামলা এবং কারফিউ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, এনসিপি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচি চালাচ্ছে এবং জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে বলেই প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, খাদ্য এবং ওষুধ সংগ্রহেও সমস্যা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের আশঙ্কা ও পর্যবেক্ষণ

পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কারফিউ বাড়ানো হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,
“এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সূচনা করতে পারে। সংঘাতের ভয়াবহতা নির্ভর করছে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তার ওপর।”

“পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাই”—গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক।

সারসংক্ষেপ

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র একটি বড় সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে পরবর্তী ২২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এই কারফিউ। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট ও যান চলাচল।

গোপালগঞ্জে বর্তমান পরিস্থিতি শুধু একটি জেলার নিরাপত্তাজনিত ইস্যু নয়, এটি জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশনারও ইঙ্গিত হতে পারে। আগামী ২২ ঘণ্টা প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই কারফিউ কি পরিস্থিতি ঠান্ডা করবে, নাকি আরও বড় কিছু ঘটনার আগাম বার্তা?

এম আর এম – ০৩৬৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button