নেপালে অরাজকতা, দেশজুড়ে কারফিউ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি

নেপালে সম্প্রতি এক বিক্ষোভের কারণে দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জেনারেশন জি নামক রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সংঘটিত বিক্ষোভ দ্রুত সহিংস রূপ নিয়েছে এবং এতে সাধারণ জনগণসহ সরকারি সম্পত্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেপালের সেনাবাহিনী জরুরি ভিত্তিতে দেশজুড়ে কারফিউ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে যতক্ষণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়। জরুরি সেবা যেমন—অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্যকর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর যানবাহন এই সময় চলাচলে অনুমোদিত থাকবে।
জেনারেশন জি’র নেতৃত্বে বিক্ষোভ ও সহিংসতা
সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দেশের বিভিন্ন শহরে জেনারেশন জি’র নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হলেও কিছু সময়ের মধ্যে তা অরাজক রূপ ধারণ করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছু দুর্বৃত্ত আগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং সহিংস কর্মকাণ্ড চালায়।
সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, বিক্ষোভের নামে চালানো এসব কার্যক্রম দণ্ডনীয় অপরাধ এবং তা কোনভাবেই সমাজ বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করতে পারবে না। তারা সতর্কবার্তা দিয়েছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কারফিউ ও চলাচলের বিধিনিষেধ
নেপালের সেনাবাহিনীর গণসংযোগ ও তথ্য অধিদপ্তর বুধবার বিকেলে জানিয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত চলাচল সীমিত থাকবে।
- আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাধারণ যানবাহনের চলাচল বন্ধ থাকবে।
- বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে কারফিউ কার্যকর হবে।
কারফিউ চলাকালে শুধুমাত্র জরুরি সেবার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এছাড়া সামাজিক সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে নজর রাখা হবে।
নাগরিকদের প্রতি সেনাবাহিনীর আহ্বান
সেনাবাহিনী সাধারণ জনগণ, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছে, ভুয়া তথ্য ও গুজবে বিভ্রান্ত না হতে। শুধুমাত্র সরকারী ঘোষণা ও প্রামাণিক সূত্রের উপর ভরসা রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া সেনাবাহিনী নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ করেছে:
- সামাজিক শান্তি বজায় রাখা।
- জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা।
- মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।
সেনাবাহিনী আশ্বস্ত করেছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে।
নেপালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
নেপাল দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি। দেশটি সংবিধান অনুযায়ী ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, কিন্তু রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ এবং নতুন নতুন আন্দোলনের কারণে সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রা প্রভাবিত হচ্ছে।
জেনারেশন জি একটি তরুণ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল, যা সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে সক্রিয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের সহিংস কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে। এটি দেশের স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
বিক্ষোভ ও সহিংসতার প্রভাব
বিক্ষোভের কারণে দেশের বিভিন্ন শহরে সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিক্ষা কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিক্ষোভে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে, যদিও সংখ্যাটি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। এছাড়া সম্পত্তি ধ্বংস, দোকানপাট লুটপাট এবং টার্গেট হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নেপালের অরাজক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও পররাষ্ট্র সংস্থা নেপালের সেনাবাহিনী ও সরকারের কাছে নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম এই অরাজকতা ও কারফিউর খবর পরিবেশন করেছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেপালের স্থায়িত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর প্রশ্ন তুলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মত
রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেপালে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ ও সংহতি বৃদ্ধি করতে হবে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, সামাজিক সহিংতা ও জনগণের আস্থা হারালে দেশ আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগোতে পারে।
তাছাড়া বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন, বিক্ষোভের নামে সহিংসতা চালানো কোনোভাবেই ন্যায্য নয়। এটি দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।
নাগরিকদের করণীয়
সেনাবাহিনী ও বিশেষজ্ঞরা সাধারণ নাগরিকদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন:
- কারফিউ ও চলাচলের বিধিনিষেধ মেনে চলা।
- জরুরি পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্দেশনা মানা।
- ভুয়া সংবাদ ও গুজব এড়ানো।
- নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারস্পরিক সহযোগিতা করা।
সামগ্রিক পরিস্থিতি
নেপালে চলমান এই অরাজক পরিস্থিতি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব নয়, বরং দেশের সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক শান্তি প্রভাবিত করছে। সেনাবাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেষ্ট, তবে নাগরিকদের সহযোগিতা অপরিহার্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশা করছেন, শান্তিপূর্ণ সংলাপ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নেপাল আবার স্বাভাবিক ও নিরাপদ পথে ফিরতে পারবে।
MAH – 12736, Signalbd.com