সিরিয়া সংকটে সৌদির বার্তা যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি মোতায়েন

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় গোষ্ঠীগত সংঘাত এবং উত্তেজনার মাঝে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্পষ্ট বার্তা প্রেরণ করেছে। তারা দাবী করেছে, সিরিয়ার উত্তপ্ত সুয়েইদা অঞ্চলে দেশের সরকারি সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়া উচিত, যা গোষ্ঠীগত দাঙ্গা ও সহিংসতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই বার্তা সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে একটি ফোনালাপে জানান।
মধ্যপ্রাচ্যের বিশিষ্ট অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট আই’-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, রিয়াদ সরকার সুয়েইদায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী মোতায়েনের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। একইসাথে, ইসরায়েলের বিমান হামলার পর সৌদি আরব ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং সিরিয়ার পরিস্থিতি শান্ত করার প্রয়াসে প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে।
সিরিয়ার সুয়েইদায় সংঘাতের পটভূমি
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা জেলা দেশের সবচেয়ে বড় দ্রুজ অধ্যুষিত এলাকা। এখানে প্রায় ৭ লাখ দ্রুজ সংখ্যালঘু বসবাস করেন। দ্রুজ সম্প্রদায়ের সাথে ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্কিত সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীর মাঝে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। এই বিরোধ সম্প্রতি তীব্র সহিংসতায় রূপ নিয়েছে, বিশেষ করে একে অপরের বাসিন্দাদের অপহরণের অভিযোগ উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে ওঠার পর।
এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষও ঘটেছে। একই সঙ্গে, ইসরায়েল সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা অজুহাতে সিরিয়ার কিছু অংশে হামলা চালিয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
সৌদি আরবের কূটনৈতিক উদ্যোগ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরব সিরিয়ার এই সংকট নিরসনে সক্রিয় ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ মার্কো রুবিওর সঙ্গে ফোনালাপে সুয়েইদায় সরকারি বাহিনী মোতায়েনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানান। তাদের বক্তব্য, গোষ্ঠীগত সহিংসতা রোধে এটি অত্যন্ত জরুরি।
এক মার্কিন সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে, রিয়াদ সিরিয়ার দক্ষিণে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারি সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। এর মাধ্যমে তারা গোষ্ঠীগত দাঙ্গা ও ইসরায়েলের অবৈধ বিমান হামলা থেকে স্থানীয়দের সুরক্ষা দিতে চাইছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলার প্রতিবাদ ও সৌদি যুবরাজের অবস্থান
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার সঙ্গে ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইসরায়েলের বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা (SPA) ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ফোনালাপে যুবরাজ সালমান সিরিয়ার উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য শারার নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং পরবর্তী সময়ে সামরিক সংঘর্ষ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সংঘাতের ফলাফল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সুয়েইদা ও দামেস্ক অঞ্চলে যে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও হামলা হয়েছে, তার ফলে স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। দ্রুজ সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বেদুইনরা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সৌদি আরবের এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ সিরিয়ার পরিস্থিতি শান্ত করার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকনির্দেশনা হতে পারে।
সিরিয়ার সরকারি বাহিনী মোতায়েন হলে স্থানীয় শান্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে, যা এলাকায় অবৈধ বাহিনীর উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করবে। একইসাথে, ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে স্থানীয় জনগণ সুরক্ষিত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিডিয়া প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ার এই সংকট ও সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যাপক ভাবে প্রতিবেদন করেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের ‘মিডল ইস্ট আই’ ও ‘আল-জাজিরা’ এসব খবর প্রচার করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির গভীরতা তুলে ধরেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদরা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সংঘর্ষ দ্রুত শান্ত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা মনে করেন, এই অঞ্চলে সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর শক্ত উপস্থিতি এবং গোষ্ঠীগত সহিংসতার অবসান খুবই প্রয়োজনীয়।
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টা
সিরিয়ার সুয়েইদা সংকট মোকাবেলায় সৌদি আরবের যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো বার্তা স্পষ্ট—দক্ষিণ সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী মোতায়েন অত্যন্ত জরুরি। এটি গোষ্ঠীগত সহিংসতা কমাতে এবং ইসরায়েলের অবৈধ হামলা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সিরিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণের প্রেক্ষিতে আশাবাদী।