বাংলাদেশ

২০২৬ সালে ঢাকায় বৈদ্যুতিক বাস চালুর পরিকল্পনা, যানজট কমাতে বড় পদক্ষেপ সরকারের

ঢাকার গণপরিবহন উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ, তিনটি রুটে চলবে ইলেকট্রিক বাস। ঢাকার যানজট কমানো ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০২৬ সালে রাজধানীতে বৈদ্যুতিক বাস চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’ নামে এই প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ঢাকার তিনটি রুটে বৈদ্যুতিক বাস চালু করা হবে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এই প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০৩০ সালের জুনে শেষ হবে।

বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটির জন্য বিশ্বব্যাংক ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ২০০ মিলিয়ন ডলার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পাবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মধ্যে ডিটিসিএ ১৫০ মিলিয়ন ডলার এবং বিআরটিএ ৫০ মিলিয়ন ডলার পাবে।

প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন

ডিটিসিএর পরিচালক (পরিকল্পনা) ধ্রুব আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পের জন্য ডিটিপি অনুমোদন জুন মাসে শেষ হবে, এরপর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা, যানজট হ্রাস, ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, “আমরা আশা করছি, অন্তত ২-৩টি রুটে সম্পূর্ণরূপে বৈদ্যুতিক বাস সার্ভিস চালু করা সম্ভব হবে ২০২৬ সালের মধ্যে।”

বাস পরিচালনার দায়িত্ব কে পাবে?

নতুন ইলেকট্রিক বাস পরিচালনার দায়িত্ব কাদের দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। ডিটিসিএ পরিচালক বলেন, “নতুন কোম্পানি গঠন করে কেউ আসতে পারে, বিদ্যমান পরিবহন কোম্পানিগুলো দায়িত্ব নিতে পারে, অথবা সরকার নিজেই কোম্পানি গঠন করে পরিচালনা করতে পারে। তবে এখনো অপারেশনাল প্ল্যান চূড়ান্ত হয়নি।”

কোন কোন রুটে চলবে ইলেকট্রিক বাস?

এই প্রকল্পের অধীনে প্রাথমিকভাবে গাজীপুর থেকে উত্তরা হয়ে ঢাকার অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক বাস চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শহরের কোন কোন রুটে এই বাস চলবে, সেটি এখনও নির্ধারণ হয়নি।

ধ্রুব আলম বলেন, “বাসগুলোর আকার হবে বড়, তাই কোন রুটে এগুলো চলবে তা নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হবে।”

কেন প্রয়োজন বৈদ্যুতিক বাস?

বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ঢাকা শহরে পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-

  1. বায়ুদূষণ কমানো – ডিজেলচালিত বাসের তুলনায় ইলেকট্রিক বাস কম দূষণ ঘটাবে।
  2. যানজট কমানো – ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক গণপরিবহন মডেল শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনবে।
  3. গণপরিবহনের উন্নয়ন – আধুনিক বাস ডিপো, বাস স্টপেজ, এবং ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (ITS) বাস্তবায়ন করা হবে।
  4. পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ – ঢাকা শহরের পরিবহন খাতকে আরও উন্নত ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে নতুন নীতিমালা তৈরি করা হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন গত বছরের নভেম্বরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের জুনে বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অর্থায়নের অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।

২০২৬ সালে ঢাকায় বৈদ্যুতিক বাস চালুর এই পরিকল্পনা সফল হলে শহরের যানজট, দূষণ ও গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এটি পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে এক বড় পদক্ষেপ। সরকারের এই উদ্যোগ ঢাকাবাসীর জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে, যা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button