বিশ্ব

‘ট্রাম্পকে বিদায় করো’— প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল ওয়াশিংটন ডিসি

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি এই সপ্তাহে বিশাল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, যা স্থানীয় প্রশাসনের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার হরণের অভিযোগ তুলেছে। প্রতিবাদকারীরা দাবি করছেন, ট্রাম্পকে немি স্থায়ীভাবে বিদায় দিতে হবে এবং রাজধানী থেকে ফেডারেল বাহিনী সরিয়ে নিতে হবে।

ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ও সমালোচনা

গত মাসে, ট্রাম্প প্রশাসন শহরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ন্যাশনাল গার্ড এবং অন্যান্য ফেডারেল বাহিনী মোতায়েন করে। তিনি দাবি করেন, এই পদক্ষেপে লক্ষ্য ছিল “আইন, শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা” পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এটি ফেডারেল ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নাগরিক স্বাধীনতার উপর হুমকি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন পদক্ষেপ নেয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় শিকাগো থেকে অভিবাসীদের বহিষ্কারের হুমকি দেন। সেখানে তিনি মূলত ১৯৭৯ সালের ভিয়েতনাম যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘অ্যাপোক্যালিপস নাউ’-এর প্যারোডি ব্যবহার করেন, যা সমালোচকদের মধ্যে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করে।

প্রতিবাদ-বিক্ষোভ: ডিসি রাস্তায় উত্তাল

সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ‘উই আর অল ডিসি’ শীর্ষক এই বিক্ষোভে অংশ নেন অবৈধ অভিবাসী, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমর্থক এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকারকর্মী। তারা বিভিন্ন স্লোগান ও পোস্টার ব্যবহার করে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করেন।
বিক্ষোভকারীদের কিছু স্লোগান ছিল:

  • “ট্রাম্পকে এখনই বিদায় করতে হবে”
  • “ডিসিকে মুক্ত করো”
  • “স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলো”

একজন বিক্ষোভকারী অ্যালেক্স লফার বলেন,

“আমি এসেছি ডিসির দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। আমরা কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরোধিতা করছি। ফেডারেল পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডকে রাস্তা থেকে সরাতে হবে।”

প্রতিবাদকারীদের মতে, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ স্থানীয় প্রশাসনের স্বাধীনতা হরণ করছে এবং নাগরিক জীবনে অযাচিত ভীতি সৃষ্টি করছে।

অপরাধ পরিস্থিতি ও সেনা মোতায়েনের যুক্তি

যদিও ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজধানীতে সহিংস অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা, কিন্তু বিচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ওয়াশিংটনে সহিংস অপরাধ ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এটি ইঙ্গিত করছে যে, সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

ন্যাশনাল গার্ড সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের অধীনে থাকে। তবে ডিসি ন্যাশনাল গার্ড সরাসরি প্রেসিডেন্টের অধীনে। এর ফলে ডিসি-তে সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে ফেডারেল ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

অন্যান্য শহরে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানোর পরিকল্পনা

ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, তিনি শিকাগোতেও ন্যাশনাল গার্ড পাঠাবেন। শিকাগো দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হওয়ায়, সেখানে সামরিকায়ন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আইনি সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার সাংবাদিকদের জানান, ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে আইসিই এজেন্ট ও সামরিক যান শিকাগোতে পাঠিয়েছে এবং আরও পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রতিবাদকারী কেসি বলেন,

“ডিসিতে যা করছে, অন্য একনায়কতান্ত্রিক সরকারগুলোও তাই করে থাকে। এখন যদি মানুষ সহ্য করে, তবে তারা ধীরে ধীরে অন্য জায়গায়ও একই কাজ করবে। তাই দেরি হওয়ার আগে থামাতে হবে।”

বর্তমানে ছয়টি রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা সৈন্যসহ দুই হাজারের বেশি সেনা ওয়াশিংটনে টহল দিচ্ছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের মিশন ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।

নাগরিক অধিকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই পদক্ষেপকে নাগরিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এক গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, সেনা মোতায়েন এবং ফেডারেল বাহিনী ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন করার প্রচেষ্টা ডেমোক্র্যাটিক প্রক্রিয়ার জন্য বিপজ্জনক

নাগরিক অধিকারকর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,

“যে কোনো সরকার যদি নিজের স্বার্থে সেনা মোতায়েন করে, তা দ্রুত নাগরিক অধিকার হরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটি কেবল ডিসি নয়, পুরো দেশকে প্রভাবিত করতে পারে।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প তার সমর্থকদের প্রতি বার্তা দেন, তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন,

“আমরা নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

তবে সমালোচকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নির্বাচনী প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা

ভবিষ্যতের প্রভাব

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, ডিসি-র মতো পদক্ষেপ অন্য শহরে, এমনকি জাতীয় পর্যায়ে নাগরিক স্বাধীনতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

ফেডারেল সেনা মোতায়েনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিভাজন ও সামাজিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। স্থানীয় সরকার ও নাগরিক অধিকারকর্মীদের মধ্যে এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ রাজনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। নাগরিক অধিকার, স্থানীয় প্রশাসনের স্বাধীনতা এবং ফেডারেল ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ আলোচনা এখন গরম।

সংবাদটি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে শক্তিশালী দ্বন্দ্ব, নাগরিক অধিকার ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা বিতর্ক, এবং এই বিষয়গুলো সামনের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

MAH – 12670,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button