বিশ্ব

ভূমিকম্পে কাঁপল আফগানিস্তান, ধ্বংসস্তূপে চাপা ৩০০’র বেশি লাশ

Advertisement

২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৮১২ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৩,০০০-এরও বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অন্তত ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের শঙ্কা।

এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর আফগানিস্তানের তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। দুর্গম এলাকা, ভাঙা সড়ক, এবং পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম না থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।

ভূমিকম্পের মাত্রা ও কেন্দ্রস্থল

স্থানীয় সময় রবিবার ভোরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল আফগানিস্তানের নানগারহার, খোস্ত এবং পাকতিকা প্রদেশের সংলগ্ন এলাকা। এ তিনটি প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পের প্রভাব আফগানিস্তান ছাড়িয়ে পাকিস্তান ও ভারতের কিছু অংশেও অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের প্রধান তথ্য:

  • মাত্রা (Magnitude): ৬.০ রিখটার স্কেল
  • গভীরতা: ১০ কিলোমিটার
  • প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা: নানগারহার, পাকতিকা, খোস্ত
  • সময়: রবিবার স্থানীয় সময় রাত ৩টার কিছু পর
  • অতিরিক্ত প্রভাব: পাকিস্তানের পেশোয়ার, ইসলামাবাদ এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়েছে

মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা বাড়ছে

ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৮১২ জন, তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩,০০০ মানুষ। উদ্ধারকর্মীরা জানাচ্ছেন, অনেক এলাকা এখনও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে, যার কারণে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন।

ধ্বংসস্তূপের নিচে শত শত মরদেহ

তালেবান সরকারের কর্মকর্তাদের মতে, অন্তত ৩০০ থেকে ৩৫০ মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা রয়েছে। উদ্ধার অভিযানে বাধা সৃষ্টি করছে ভাঙা সড়ক, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এবং উদ্ধার সরঞ্জামের অভাব।

উদ্ধার কার্যক্রমের অবস্থা:

  • ৪০টিরও বেশি হেলিকপ্টার ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে
  • আহতদের রাজধানী কাবুলে নেওয়া হচ্ছে
  • স্থানীয় মানুষ হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করছে

মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন, সাহায্যের জন্য হাহাকার

বেশ কয়েকটি এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে উদ্ধারকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার জানিয়েছে, তারা জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাচ্ছে।

কেন এত ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হলো?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তানের গ্রামীণ বাড়িগুলোর বেশিরভাগই কাদা ও মাটির তৈরি, যা ভূমিকম্পে সহজেই ভেঙে পড়ে। এর আগে ৪৮ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় ধ্বংসের মাত্রা আরও বেড়েছে।

ভূমিকম্পের প্রভাব কোথায় কোথায় পড়েছে?

  • কাবুল: কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজধানী কাবুলে কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রবল কম্পন অনুভূত হয়।
  • ইসলামাবাদ: ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
  • পেশোয়ার: পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ভূমিকম্পের আগে টানা বৃষ্টি

ভূমিকম্পের আগের ৪৮ ঘণ্টা ধরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছিল। এ কারণে মাটির ঘরগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে ভূমিকম্পে অধিকাংশ বাড়ি ভেঙে পড়ে এবং মানুষ চাপা পড়ে যায়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ (UN), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), এবং বিভিন্ন মানবিক সংস্থা ইতিমধ্যেই সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী হওয়ায় তারা জরুরি মেডিকেল সহায়তা ও খাদ্য পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তুরস্ক, ইরান এবং কাতারও সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

আফগানিস্তানের ভূমিকম্পের ইতিহাস

আফগানিস্তান একটি ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। এর আগে ২০২২ সালের জুন মাসে পাকতিকা প্রদেশে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ১,০০০-এর বেশি মানুষ মারা যায়। ১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানের তাকহার প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৪,০০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

উদ্ধার কার্যক্রমের চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা দিয়েছে—

  • দুর্গম এলাকা ও ভাঙা সড়ক
  • মোবাইল নেটওয়ার্কের অচলাবস্থা
  • পর্যাপ্ত হেলিকপ্টার ও উদ্ধার সরঞ্জামের অভাব
  • শীতল রাতের তাপমাত্রা, আহতদের বেঁচে থাকার ঝুঁকি

মানবিক সংকট

হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের অভাবে আহতদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুর মুখে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

MAH – 12600,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button