বিশ্ব

চীনে মোদিকে লাল গালিচায় উষ্ণ অভ্যর্থনা

Advertisement

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে পৌঁছেছেন। শনিবার দুপুরে তার বিশেষ বিমান তিয়ানজিনের বিনহাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলে লাল গালিচা বিছিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। চীনের তথ্য ও সম্প্রচার এবং শিল্পমন্ত্রী লি লেচেং নিজে উপস্থিত থেকে মোদিকে বরণ করে নেন।

এসসিও সম্মেলনে মোদির অংশগ্রহণ

রোববার থেকে চীনের তিয়ানজিন শহরে শুরু হচ্ছে দুদিনব্যাপী এসসিও বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান যোগ দিচ্ছেন। ভারতও এ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ হওয়ায় মোদির সফর আন্তর্জাতিক মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

মোদি এসসিও সম্মেলনের মূল অধিবেশনে ভাষণ দেবেন বলে জানা গেছে। সেখানে তিনি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জ্বালানি নীতি এবং সন্ত্রাস দমন বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন।

সাংস্কৃতিক অভ্যর্থনা

মোদি পৌঁছানোর পর বিমানবন্দরে বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী চীনা নৃত্যের মাধ্যমে শিল্পীরা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন। ভারত ও চীনের শিল্প-সংস্কৃতির এ বিনিময় অনুষ্ঠান সফরকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো মন্তব্য করেছে।

ভারত-চীন সম্পর্ক

২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনা সেনাদের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে নেমে যায়। সেই ঘটনার পর থেকে সীমান্ত ইস্যুতে একাধিকবার উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুদেশই কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে।

মোদির এবারের সফরকে সেই প্রচেষ্টারই অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ও ইতিবাচক বার্তাবিনিময় পরিস্থিতি কিছুটা নরম করেছে।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গ

বিশ্লেষকদের মতে, মোদির চীন সফর কেবল এসসিও সম্মেলনের জন্য নয়; বরং বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক কূটনীতির অংশ। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করেছে। অপরদিকে ভারত মার্কিন চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে।

ফলে মোদি চীন সফরে এসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলাদা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে সীমান্ত ইস্যু ছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা যুদ্ধ এবং বিশ্ব বাণিজ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিশ্বের নজর তিয়ানজিনে

মোদির এই সফরের দিকে কেবল প্রতিবেশী দেশগুলো নয়, বরং পুরো বিশ্ব নজর রাখছে। কারণ, ভারত ও চীন এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতি এবং বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ এ দুই দেশে বসবাস করে।

চীন ইতোমধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, আর ভারত দ্রুত তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে আসছে। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়লে তা শুধু এশিয়া নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বিশ্লেষকদের মতামত

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও চীনের সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলা গেলে সেটি হবে ‘এশিয়ান সেঞ্চুরি’র পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এশিয়াকে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে হলে ভারত-চীন সহযোগিতা অপরিহার্য।

তবে সীমান্ত ইস্যু এবং কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখনও বড় বাধা হয়ে রয়েছে। তাই মোদির এবারের সফরে প্রকৃত অগ্রগতি কতটা হবে তা দেখতে আগ্রহী আন্তর্জাতিক মহল।

পরিশেষে

চীনে নরেন্দ্র মোদির লাল গালিচায় অভ্যর্থনা নিঃসন্দেহে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে কূটনীতির এই সৌজন্য বাস্তব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমীকরণে কতটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, তা নির্ভর করছে আসন্ন বৈঠকগুলোর ফলাফলের ওপর। বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে আছে — ভারত-চীনের নতুন অধ্যায় কি সত্যিই শুরু হতে চলেছে?

এম আর এম – ১০৯৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button