বিশ্ব

ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট প্যালেস ও বিদ্যুৎ স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত

Advertisement

ইসরায়েলের বিমান বাহিনী ইয়েমেনের রাজধানী সানায় একাধিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট প্যালেস অবস্থিত সামরিক কম্পাউন্ড, দুটি বিদ্যুৎ স্টেশন এবং একটি জ্বালানি ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইয়েমেনি সেনারা।

ইসরায়েলের বিমান বাহিনী ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। সামরিক সূত্র জানিয়েছে, এই হামলায় প্রেসিডেন্ট প্যালেসসহ গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জ্বালানি অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, হুতিদের সাম্প্রতিক রকেট ও ড্রোন হামলার জবাব হিসেবেই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

হামলার বিস্তারিত ও ক্ষয়ক্ষতি

রবিবার রাতে একযোগে পরিচালিত এই হামলায় প্রায় এক ডজন যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। সামরিক সূত্র অনুযায়ী, চারটি মূল লক্ষ্যবস্তুতে ৩০টিরও বেশি বোমা নিক্ষেপ করা হয়। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল সানার প্রেসিডেন্ট প্যালেস অবস্থিত সামরিক কম্পাউন্ড।
এছাড়া দুটি বিদ্যুৎ স্টেশন এবং একটি জ্বালানি ডিপোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হামলার ফলে সানার বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অনেক ভবনের জানালা ও কাচ ভেঙে পড়ে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বক্তব্য

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, সানার প্রেসিডেন্ট প্যালেস কোনো প্রশাসনিক ভবন নয়, বরং হুতিদের সামরিক সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এখান থেকেই হুতিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছিল বলে দাবি তাদের।
আইডিএফ আরও জানায়, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো শুধুমাত্র বেসামরিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল না; বরং সামরিক কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তি সরবরাহ করছিল।

হুতিদের প্রতিক্রিয়া

হুতি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলা নিছক আগ্রাসন। তারা দাবি করেছে, প্রেসিডেন্ট প্যালেস ছিল একটি ঐতিহাসিক প্রশাসনিক ভবন, যাকে টার্গেট করে বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে।
হুতিদের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখব। এই ধরনের হামলা আমাদের লড়াইয়ের ইচ্ছাশক্তি আরও দৃঢ় করবে।”

ইসরায়েল ও ইয়েমেনের হুতিদের মধ্যে শত্রুতা নতুন নয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হুতিরা একাধিকবার ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলও ইয়েমেনে বারবার বিমান হামলা চালিয়েছে।
হুতিরা দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েল মনে করে, ইরান ও তার সহযোগীরা ইসরায়েলবিরোধী এক আঞ্চলিক অক্ষ গড়ে তুলছে, যার অংশ হিসেবে ইয়েমেনের হুতিরাও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ার কারণে ইয়েমেনের সাধারণ জনগণ বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে।
জাতিসংঘ এর আগে সতর্ক করেছিল, ইয়েমেন ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি। নতুন করে এমন হামলা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলার দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, হুতিদের সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করা। দ্বিতীয়ত, তাদের আন্তর্জাতিক সমর্থন কমানো। তবে বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস করা বেসামরিক জনগণের ভোগান্তি বাড়াবে, যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ড. হাসান মাহমুদ বলেন, “এই হামলা শুধু সামরিক বার্তা নয়, বরং রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল। তবে এতে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

সংক্ষিপ্তসার

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট প্যালেস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ার ঘটনা নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। হুতিদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেটি এখন আঞ্চলিক রাজনীতির বড় প্রশ্ন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাতের আগুন জ্বালাতে পারে, যা কেবল দুই পক্ষ নয় বরং পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

এম আর এম – ১০১২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button