প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ ৫ আগস্ট

জাতীয় সংসদ দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক ঘোষণা, বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষ এক দিন হিসাবে চিহ্নিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আজ বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই গুরুত্বপুর্ণ ঘোষণাপত্রটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), যা দেশের সর্বত্র মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠের প্রস্তুতি সম্পন্ন
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিতব্য এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে প্রস্তুতি চলছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ রাজনীতিতে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক অফিসিয়াল বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বার্তায় জানানো হয়, “অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।”
ঐতিহাসিক ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ ও তার গুরুত্ব
১৯৭৫ সালের জুলাই মাস বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবময় একটি অধ্যায়। ওই সময়ে জাতীয় জীবনে গণতন্ত্রের জন্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক আন্দোলন ও সংগ্রামের লহর সৃষ্টি হয়। ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত এই আন্দোলন দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ইভেন্ট। প্রতি বছর জুলাই মাসে জাতীয়ভাবে এই দিবসটি পালিত হয় এবং সেই সংগ্রামের স্মৃতিকে সম্মান জানানো হয়।
সুতরাং, এই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ হলো ঐতিহাসিক ঐ দিনের স্মৃতিচারণ ও ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক নির্দেশিকা, যা জনগণের অধিকার, মুক্তি ও দেশের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও শহিদ পরিবারের সদস্যরা
বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিতব্য ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই শহিদ পরিবারের সদস্যরা, এবং আহত মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়াও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিয়োজিত শিল্পীগোষ্ঠী ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তুলবেন।
দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ও বিশেষ ড্রোন শো
আজকের ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ১১টা থেকে বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠী তাদের প্রতিভা উপস্থাপন করবেন। বিকেল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণাপত্র পাঠের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় থাকবে আকর্ষণীয় ড্রোন শো, যা দর্শকদের মুগ্ধ করবে। রাত ৮টায় বিভিন্ন ব্যান্ড দল তাদের পরিবেশনা দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটাবে।
নিরাপত্তা ও যান চলাচল ব্যবস্থা
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার কারণে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য ডিএমপি পূর্ণ প্রস্তুত আছে।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ – বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নতুন দিশা
এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি নতুন করে গুরুত্বারোপ করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই বার্তা দিবেন যে, দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও ঐক্যেই রয়েছে উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস: জীবনী ও অবদান
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সমাজসেবক। তিনি ‘গ্রামীন ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্বখ্যাত, যা বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ ও মাইক্রোফিন্যান্স ধারণাকে প্রসারিত করেছে। তার দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তার রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকা বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি মাইলফলক।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অন্তর্বর্তী সরকার
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে, যার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকার দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কাজ করছে। ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এই অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক কৌশল এবং জনগণের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা।
আগামী দিনের প্রত্যাশা ও দেশের তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা
দেশের তরুণ প্রজন্ম এই ঘোষণাপত্র থেকে নতুন শক্তি ও উৎসাহ গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তরুণরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সেই প্রজন্মের জন্য একটি দিকনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।
৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে, যখন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করে দেশের গণতন্ত্রকে নতুন দিগন্ত দেখাবেন। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল, শহিদ পরিবারের সদস্য ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে এই অনুষ্ঠান, তাই দেশের প্রত্যেক নাগরিক এ ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারবেন। নিরাপত্তার কারণে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ থাকবে, তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মের জন্য নতুন স্বপ্ন এবং উন্নয়নের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। এই দিনটি শুধু স্মৃতির একটি অংশ নয়, বরং দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতিও বয়ে আনে।
MAH – 12133, Signalbd.com