বিশ্ব

হামাস সদস্যদের খুঁজে খুঁজে বের করা হবে: ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের একবার মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও ধরনের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায় না। ট্রাম্পের মতে, গাজায় বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির পর হামাসের জন্য ভবিষ্যত কী হতে পারে, তা নিয়েই তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে।

হামাস যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী নয়: ট্রাম্পের মন্তব্য

ট্রাম্প বলেন, “আমরা বর্তমানে চূড়ান্ত ধাপে জিম্মি মুক্তির অপেক্ষায় আছি। হামাস জানে, যদি সব বন্দী মুক্ত হয়, তাহলে তার পরিণতি তাদের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। তাই তারা যুদ্ধবিরতি চায় না, তারা এই অবস্থায় থাকা থেকে বেশি কিছু চায় না।”

তাঁর ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করতে এখনই আগ্রহী নয়, বরং অল্প কিছু সময়ের জন্যই যুদ্ধ বন্ধ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে যাতে গাজায় বন্দীদের মুক্তি কার্যকর করা যায়।

হামাসকে খুঁজে বের করে দমন করা হবে: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

ট্রাম্প আরও বলেছেন, “হামাসকে খুঁজে খুঁজে বের করা হবে। তারা সত্যিই কোনো চুক্তি করতে চায় না, তারা যেন মরতে চায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বিপজ্জনক।”

এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং সংগঠনটির সব সদস্যদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূতের বক্তব্য

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ওয়াশিংটন যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা কমিয়ে দিয়েছে। তাঁর মতে, হামাস যুদ্ধবিরতিতে খুব একটা আগ্রহী নয়। একই সঙ্গে ইসরায়েলও কাতার থেকে তাদের আলোচক দল ফিরিয়ে নিয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছিল।

কাতার-মিসরের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকায় হামাসের প্রশংসা

হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সত্যিই চেয়েছিল মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করতে। তারা কাতার ও মিসরের ‘গঠনমূলক ও ইতিবাচক’ ভূমিকার প্রশংসা করেছে, যারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।

ইসরায়েলের পরিকল্পনা: যুদ্ধবিরতির সময় গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের সরানো

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গত কয়েকদিনে জানান, যুদ্ধবিরতির সময় তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি আটকশিবিরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেবেন। এর লক্ষ্য হলো, ভবিষ্যতে গাজা থেকে পুরো ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী সরিয়ে ফেলা।

গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি চ্যালেঞ্জ

গাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই যুদ্ধবিরতির আওতায়, ১০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে গাজার ওপর ইসরায়েলের হামলা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।

তবে হামাস তাদের দাবিতে জোর দিয়েছে যে, তারা একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি চায়, যা শুধু সাময়িক নাও হতে পারে।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের যুদ্ধবিরতি আহ্বান

গাজায় চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ মোট ২৮ দেশ যুদ্ধ অবিলম্বে থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে কঠোরভাবে অনুরোধ করছে যেন তারা জিম্মিদের মুক্তি দিয়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সংশয় ও পরিকল্পনা

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বারবার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, জিম্মি মুক্তি পাওয়ার পর তারা আবারও যুদ্ধ শুরু করবে এবং গাজা থেকে সমস্ত ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি যুদ্ধবিরতির আড়ালে ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য

চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও গাজায় তাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তিনি জানিয়ে দেন, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য গাজায় সন্ত্রাসী উপদ্রব নির্মূল করা এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত কী?

মধ্যপ্রাচ্যের গাজা খণ্ডে সংঘর্ষের শেষ নেই। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা প্রায়ই ভেস্তে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান এবং হামাসের অমনোযোগী মনোভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি চাইছে না, বরং নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ অনুযায়ী সাময়িক যুদ্ধবিরতি অথবা জিম্মি মুক্তির মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

দ্বিপক্ষের মাঝে অস্থিতিশীলতা থাকায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনো দুরূহ লক্ষ্য। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়ার সাথে সাথে ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনা ও সম্ভাব্য চুক্তি হতে পারে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button