বিশ্ব

ভারতীয় ভূখন্ডে আ. লীগের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নয় সরকার: জয়সওয়াল

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বুধবার জানিয়েছেন, ভারত সরকারের কোনো ধরনের অবগতির বাইরে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম ভারতীয় ভূখণ্ডে পরিচালিত হচ্ছে না। এই মন্তব্য তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে দিয়েছেন।

ভারতের অবস্থান স্পষ্ট

জয়সওয়াল বলেন, ভারতের ভূখণ্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা কোনো বাংলাদেশবিরোধী কার্যকলাপ বা ভারতীয় আইনের পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ভারত সরকার অবগত নয়। তিনি আরও বলেন, ভারত সরকারের নীতি হলো তাদের মাটিতে অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

তিনি উল্লেখ করেন, “ভারত প্রত্যাশা করছে যে বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা ও ম্যান্ডেট নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছি।”

বাংলাদেশের উদ্বেগ ও অনুরোধ

এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ভারতের রাজধানী দিল্লি ও কলকাতায় বাংলাদেশে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অফিস স্থাপনের বিষয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বাংলাদেশের বক্তব্যে বলা হয়, ভারতের মাটিতে রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী গুরুতর অপরাধে পলাতক থাকা দলের সিনিয়র নেতারা ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে অনুরোধ করেছে, ভারতীয় মাটিতে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক যেন বাংলাদেশবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। একই সঙ্গে তারা দ্রুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

আগে কী ঘটেছিল

গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় এক এনজিওর আড়ালে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা দিল্লি প্রেসক্লাবে জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে সংবাদমাধ্যমের মধ্যে পুস্তিকা বিতরণ করেন। ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই কার্যক্রমের কথা নিশ্চিত করা হয়।

এছাড়া, এই ধরনের কর্মকাণ্ড পারস্পরিক বিশ্বাস ও দুই দেশের সু-প্রতিবেশী সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরের সময় এই ধরনের ঘটনা দীর্ঘমেয়াদে উভয় দেশের সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।

ভারতের নীতি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

ভারতের নীতি অনুযায়ী, তাদের মাটিতে অন্য দেশের রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সকল দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জয়সওয়াল পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, “ভারত সরকার ভারতের ভূখণ্ডে অন্য দেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কার্যকলাপের অনুমতি দেয় না। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিটি ভিত্তিহীন।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অবস্থান ভারতের নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা প্রতিফলিত করছে। পাশাপাশি, এটি দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি ভারতের অঙ্গীকারকেও তুলে ধরে।

প্রভাব ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতের এই অবস্থানের কারণে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সূক্ষ্ম হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক প্রভাবিত হতে পারে।

এছাড়া, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করতে পারে।

পরিশেষে

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশবিরোধী কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং এই ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। দুই দেশের মধ্যে সু-প্রতিবেশী সম্পর্ক বজায় রাখতে উভয় পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা পরবর্তী কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে।

এম আর এম – ০৯৬২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button