বিশ্ব

ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

Advertisement

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মাঝে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইয়েমেনি প্রতিরোধ বাহিনীর সাম্প্রতিক একটি সামরিক অভিযান। তাদের দাবি, ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারা হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সরাসরি হামলা চালিয়েছে। ইয়েমেনের হুতি বাহিনীর সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক ভিডিও বার্তায় এই হামলার কথা নিশ্চিত করেন এবং বলেন, এটি ছিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোর একটি পদক্ষেপ।

হামলার বিস্তারিত ও ইয়েমেনি বাহিনীর বক্তব্য

হুতিদের দাবি অনুযায়ী, তাদের এই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে নতুন প্রজন্মের ‘প্যালেস্টাইন-২’ নামক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ইয়াহিয়া সারির ভাষ্যমতে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সফল হয়েছে এবং তা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরও জানান, “আমাদের সামরিক অভিযান ইসরায়েলের মূলভূমিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে। গাজায় চলমান গণহত্যা এবং আল-আকসা মসজিদের অবমাননার জবাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও সরকারি অবস্থান

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা হামলার ব্যাপারে সজাগ ছিল এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্র রাতের আঁধারে আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, বিমান চলাচলে সাময়িক কিছু বাধা সৃষ্টি হলেও বিমানবন্দর নিরাপদ রয়েছে এবং বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো মেলেনি।

তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, হামলার সময় বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয় এবং শত শত যাত্রী নিরাপত্তাজনিত কারণে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট ও পূর্ববর্তী হামলা

ইসরায়েল-গাজা সংঘাত নতুন কিছু নয়। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের সামরিক অভিযান দীর্ঘদিন ধরেই চলছে, এবং তার প্রতিবাদে হুতি বিদ্রোহীরা প্রায়শই ইসরায়েলের দিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করে আসছে।

কিন্তু এবারের হামলার বিশেষত্ব হলো ‘হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ ব্যবহারের বিষয়টি। এই ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন। পূর্বেও হুতিরা ড্রোন এবং স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, তবে হাইপারসনিক প্রযুক্তি এবারই প্রথম উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহৃত হলো।

আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া ও সামরিক বিশ্লেষণ

এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। ইরান, সিরিয়া, ও লেবাননের একাধিক রাজনৈতিক শক্তি এই হামলাকে ‘প্রতিরোধের প্রতীক’ হিসেবে দেখছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু দেশ ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বে আঘাতের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা একদিকে যেমন হুতিদের প্রযুক্তিগত উন্নতির ইঙ্গিত দেয়, তেমনি ইসরায়েলের নিরাপত্তাব্যবস্থায় নতুন হুমকির কথাও প্রকাশ করে। তাদের মতে, “যদি হুতিরা সত্যিই হাইপারসনিক প্রযুক্তি অর্জন করে থাকে, তবে এটি গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা সমীকরণ বদলে দিতে পারে।”

আন্তর্জাতিক চাপ ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

জাতিসংঘ ইতিমধ্যে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা গেছে।

হামলার ফলে ভবিষ্যতে ইসরায়েল আরও আক্রমণাত্মক সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, বিশেষ করে গাজা ও ইয়েমেনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে। এছাড়া, সৌদি আরব ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর উপর চাপ বাড়তে পারে, যেহেতু ইয়েমেনি হামলা তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।

সারসংক্ষেপ  

ইয়েমেনি হুতি বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, এই হামলা ছিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোর একটি শক্তিশালী বার্তা। যদিও ইসরায়েল এটি প্রতিহত করার কথা বলছে, তবুও এই ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন প্রযুক্তিগত হামলা শুধু সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং কূটনৈতিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই সংঘাত কোন দিকে মোড় নেবে, এবং ভবিষ্যতে এমন আরও হামলা কি প্রত্যাশিত?

এম আর এম – ০৬৯৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button