আঞ্চলিক

কিশোরগঞ্জে ডাকাতির চেষ্টা: পাঁচজন গণপিটুনির শিকার, হাসপাতালে ভর্তি

Advertisement

২০২৫ সালের ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ২টার দিকে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের সাদুল্লারচর এলাকায় একটি বাসায় ডাকাতির চেষ্টা হয়। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া করে পাঁচজনকে আটক করে গণপিটুনি দেয় এবং পুলিশে সোপর্দ করে। আহতরা কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক জনকে ছাড়া বাকি সবাই ঢাকা পাঠানো হয়।

ডাকাতির ঘটনা

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের সাদুল্লারচর এলাকায় আবুল হাশেম মাস্টারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে ৮-১০ জনের ডাকাতদল বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তারা অস্ত্রের মুখে বাসার সবাইকে জিম্মি করে এবং স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নেয়।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার আগের দিন বিকেলে সবুজ নামের এক ব্যক্তি বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিতে আসেন। তিনি বাড়ি দেখে যাওয়ার পর রাতে ফোন করে বলেন, বাসা ভাড়া নিতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে এনেছেন। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে পরদিন সকালে আসতে বলা হয়।

সেদিন রাত ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে নিচতলার কেচিগেটের তালা ভেঙে এবং দোতলার দরজার লক ভেঙে ডাকাতদল বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তারা প্রথমে গলায় থাকা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। এরপর পরিবারের সদস্যদের অস্ত্র ঠেকিয়ে আরও দেড় ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৪২ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার টাকার একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন লুট নেয়।

গণপিটুনির ঘটনা

ডাকাতেরা বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে আবুল হাশেম মাস্টারের ছেলে মিজানুর রহমান চিৎকার করে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে আশপাশের লোকজনকে ডাকেন। স্থানীয়রা ছুটে এসে ধাওয়া দিলে ডাকাতের দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পালাতে চেষ্টা করে। এ সময় পাঁচজন ধরা পড়ে এবং গণপিটুনির শিকার হয়।

মিজানুর বলেন, “আমার ছেলে নিজেই বলেছে—আব্বা, এই লোকটাই বিকেলে বাসা ভাড়া নিতে এসেছিল।”

হাসপাতালে চিকিৎসা

আহত ডাকাতদের কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মফিজুর রহমান বলেন, “একজনকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে, একজন অবজারভেশনে আছে এবং বাকিদের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।”

পুলিশি পদক্ষেপ

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

গণপিটুনির প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে গত বছর “গণপিটুনি” বা “লাইঞ্চিং” ঘটনা বাড়ছে। বিভিন্ন জেলায় সন্দেহভাজন ডাকাতদের গণপিটুনি দিয়ে মারা গেছে বা গুরুতর আহত হয়েছেন। যেমন:

  • শরীয়তপুরে এক ঘটনার সময় ২ জন ডাকাত মারা গেছেন, আরো ৫ জন আহত ও ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
  • নারায়ণগঞ্জে সন্দেহভাজন এক ডাকাত ধরাইয়া গণপিটুনি, হাসপাতালে নেয়ার সময় মারা যায়।
  • চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দুই সন্দেহভাজন ডাকাতকে গণপিটুনি দিয়ে মারা হয়, আরো পাঁচ আহত।

এসব ঘটনায় পুলিশের টহল, মামলা এবং আইনি তদন্ত প্রক্রিয়া একটু দেরি হলেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলায়-জেলায় স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আইন-শৃঙ্খলা সুরক্ষায় নির্দেশনা দরকার তা আলোচনীয় প্রশ্ন হিসেবে উঠে এসেছে।

বিশ্লেষণ: কেন এত উত্তেজনা?

গ্রামাঞ্চলগুলোতে আইনের নিষ্ঠুরতা ও বিচারিক বিলম্ব জন মানুষকে নিজেদের হাতে “ন্যায়বিচার” করতে উদ্বুদ্ধ করে। আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভূত; সন্দেহে কোনো অপরাধ করলেও জনতা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী। পুলিশের বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও প্রচারণা কর্মসূচি যেমন DB-র অভিযান নয়, স্থানীয় পুলিশের সাড়া দেরিতে কার্যকর হওয়ায় ঘটনাগুলো ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে।

পাঠকদের জন্য পরামর্শ ও পরিকল্পনা

  • আইনি সচেতনতা বৃদ্ধি: গণপিটুনি মামলা দায়ের করার চেয়ে আহতদের চিকিৎসা-নিরাপত্তা দ্রুত নিশ্চিত করা উচিত।
  • অপরাধ-প্রতিরোধে সমন্বয়: গ্রামপুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটির সমন্বয় বাড়ানোর উদ্যোগ জরুরি।
  • পুলিশের কার্যক্রম: বাংলাদেশ পুলিশ ও ডিবি‑কে ফোকাস করতে হবে নির্দিষ্ট মাধ্যম যেমন মোবাইল কমিউনিকেশন, মিডিয়া প্রচারণা, শিক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদিতে।

লতিবাবাদ ইউনিয়নে সংঘটিত ডাকাতির চেষ্টা ও গণপিটুনি ঘটনা শুধুমাত্র একটি স্থানীয় অপরাধ নয়, এটি বাংলাদেশে আইনের শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদও বটে। এ ধরনের ঘটনায় শুধু অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নয়, সমাজে বিদ্যমান বিচার-অবহেলা, ত্রুটিপূর্ণ আইন প্রয়োগ ও পুলিশি কার্যক্রমের সময়োপযোগীতা—এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার তৈরি বড় সুযোগ রয়েছে।

MAH – 12166 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button