উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। ২১ দিন অন্ধকারে ডুবে থাকার পর অবশেষে আলোকিত হয়েছে মওলানা ভাসানী সেতু। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু হওয়ায় এখন রাতেও সেতু ও পারাপারের এলাকা ঝলমল করছে।
সেতুর বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু
সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ মওলানা ভাসানী সেতু উদ্বোধনের ঠিক পরের দিনই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ২১ দিন ধরে সেতু ও আশপাশের এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকায় চুরি, ছিনতাই ও দুর্ঘটনার মতো নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছিল।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সেতুর প্রায় ৮০ শতাংশ ল্যাম্পপোস্টসহ সড়কের বিদ্যুৎ পুনরায় চালু করা হয়েছে। ফলে তিস্তার বুকে সেতুটি আলোকিত হয়ে উঠেছে এবং পারাপারের জন্য যাত্রীদের চলাচল অনেক নিরাপদ হয়েছে।
পেছনের কারণ ও চুরি সংক্রান্ত ঘটনা
উদ্বোধনের ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ ২১ আগস্ট, ছয়টি ল্যাম্পপোস্টের দুই পাশে ৩১০ মিটার বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি হয়। এরপর ২৪ আগস্ট দুই শতাধিক রিফ্লেক্টর লাইটও চুরি হয়। এই ঘটনায় সেতুর নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি হয় এবং পারাপারের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অন্ধকারের কারণে রাতে বিভিন্ন অপরাধের সুযোগ বৃদ্ধি পেত। বিশেষ করে ছিনতাই, চুরি ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ত।
সেতুর গুরুত্ব ও প্রভাব
মওলানা ভাসানী সেতু গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। সেতু চালু হওয়ায় যাতায়াত অনেক সহজ ও নিরাপদ হয়েছে। নদী পারাপারে যাত্রী, যানবাহন ও ব্যবসায়িক পণ্য দ্রুত পৌঁছাতে পারছে।
স্থানীয়দের আশা, সেতুর আলোর কারণে রাতের অপরাধ ও দুর্ঘটনা কমবে। এছাড়া সেতুর আলোকিত দৃশ্য সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে আবহাওয়ায় নতুন প্রাণ যোগ করেছে।
নিরাপত্তা ও পুলিশের প্রতিক্রিয়া
সেতুর হরিপুর প্রান্তের বাসিন্দা সজল মিয়া বলেন, “প্রতিদিন হাজারো মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে সেতুর দুই পাড়ে স্থায়ী পুলিশ বক্স থাকা আবশ্যক। বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় পরিবেশ আলোকিত হলেও নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন।”
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল চৌধুরী জানান, স্থানীয়দের নিরাপত্তার দাবির প্রেক্ষিতে এবং জনসাধারণের সুরক্ষার জন্য দুই পাড়ে পুলিশ বক্স স্থাপনের জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ চলছে।
দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা ও সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এই সেতুর আলোকিত দৃশ্যের অপেক্ষায় ছিলেন। ২১ দিন অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত হওয়ায় পারাপারের মানুষরা স্বস্তি পাচ্ছেন। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডও এখন স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়েছে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “সেতুর আলোয় আমাদের রাতের যাত্রা অনেক নিরাপদ হয়েছে। অন্ধকারের কারণে যাতায়াতে যে ঝুঁকি ছিল, তা এখন কমেছে। আমরা আশা করি পুলিশ বক্স স্থাপন হলে পুরো এলাকায় নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
পরিশেষে
২১ দিনের অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত হওয়া মওলানা ভাসানী সেতু গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের জন্য আনন্দের খবর। সেতুর কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় যাতায়াত সহজ হয়েছে এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে স্থানীয়রা মনে করছেন, সেতুর দুই পাশে স্থায়ী পুলিশ বক্স স্থাপন করলে রাতের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত হবে।
সেতুর আলো এখন তিস্তার বুকে নতুন জীবন ও সৌন্দর্য যোগ করেছে এবং উত্তরাঞ্চলের মানুষের আশা ও আনন্দকে উজ্জ্বল করেছে।
এম আর এম – ১৩১৮,Signalbd.com



