গাজায় চলমান মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে পানি সঙ্কটের কারণে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ যখন সামান্য বিশুদ্ধ পানির আশায় অপেক্ষা করছে, তখন তাদেরকে বাধ্য হয়ে ঘোলা ও দূষিত পানি পান করতে হচ্ছে। এতে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ—সবাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এই পানিই রোগ ছড়াচ্ছে, কিন্তু বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় তারা বাধ্য হচ্ছেন এই পানি পান করতে।
গাজায় পানির জন্য মরিয়া মানুষের সংগ্রাম
দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় প্রতিদিনই সকাল থেকে মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুটা পানি পাওয়ার আশায়। একজন ফিলিস্তিনি নারী রানা ওদেহ বলেন, তিনি প্রতিদিন ভোরে উঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন একটি কলস ভর্তি পানি সংগ্রহ করতে। তিনি জানেন পানি ঘোলা ও দূষিত, তবুও দুই ছোট সন্তানের জন্য ভাগ করে দেন। তার ভাষায়, “আমরা জানি এই পানি ক্ষতিকর, কিন্তু পানি ছাড়া বাঁচব কীভাবে?”
এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মাহমুদ আল-দিবস নামের আরেকজন। তিনি গাজার শহর থেকে উচ্ছেদ হয়ে আল-মাওয়াসিতে এসেছেন। তিনি মাথায় প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে পানি ঢেলে সামান্য স্বস্তি খুঁজছিলেন। তিনি বলেন, “তাবুর ভেতর গরম, বাইরে গরম। বিশুদ্ধ পানি নেই, তাই বাধ্য হয়েই দূষিত পানি খেতে হচ্ছে।”
পানি সংকটের পেছনের কারণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার পানির অবকাঠামো দীর্ঘ যুদ্ধ ও অবরোধে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে, যা বাকি রয়েছে তাও লবণাক্ত ও দূষিত। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো কিছু পানি সরবরাহ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এর ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে রোগ ঝুঁকি মাথায় রেখে দূষিত পানি পান করতে হচ্ছে।
শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি
চিকিৎসকদের মতে, এই দূষিত পানি পান করার ফলে শিশুদের ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা ও চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্করাও মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হোসনি শাহিন নামের এক গাজাবাসী বলেন, “এই পানি পান করলে আমাদের পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কিন্তু কোনো উপায় নেই, না খেলে গরমে আমরা মরব।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, গাজার অধিকাংশ শিশু বর্তমানে অপুষ্টি ও পানিবাহিত রোগে ভুগছে। চিকিৎসা সেবার অভাবে অনেক শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গাজার পানি সংকটের খবর ছড়িয়ে পড়লেও কার্যকর পদক্ষেপ এখনো সীমিত। কিছু ত্রাণ সংস্থা জরুরি পানি সরবরাহ শুরু করেছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দীর্ঘ মেয়াদে পানি অবকাঠামো পুনর্গঠন না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে এখনই টেকসই সমাধান দরকার। শুধু অস্থায়ী সাহায্যে সমস্যার সমাধান হবে না। আন্তর্জাতিক সমাজকে গাজার পানি অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া, যুদ্ধবিরতি ও শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়া মানবিক সংকট কমবে না।
সংক্ষিপ্তসার
গাজায় পানি সংকট কেবল একটি মানবিক সমস্যা নয়, এটি টিকে থাকার লড়াই। প্রচণ্ড গরম আর তৃষ্ণায় গাজাবাসীরা যখন দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন, তখন তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে প্রতিদিন। প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কবে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এই সংকট নিরসনে।
এম আর এম – ০৮৭৯, Signalbd.com



