গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর: হামাস মুক্তি দিল তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে
গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির শুরুর দিনেই হামাস তিনজন ইসরায়েলি নারী জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। তবে, এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা বেশি।
যুদ্ধবিরতি শুরুর জটিলতা
রবিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পরিষ্কারভাবে জানান যে, হামাস ইসরায়েলের কাছে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের তালিকা না দিলে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে না।
এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, “প্রধানমন্ত্রী আইডিএফকে (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) নির্দেশ দিয়েছেন, যতক্ষণ না হামাস প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের নামের তালিকা সরবরাহ করেছে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না।”
শেষ পর্যন্ত হামাস তালিকা সরবরাহ করে, এবং যুদ্ধবিরতি সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে কার্যকর হয়।
হামাসের প্রতিক্রিয়া ও বিলম্বের কারণ
হামাস তাদের বিবৃতিতে জানায়, মুক্তিপ্রক্রিয়ার প্রথম ব্যাচের তালিকা দিতে বিলম্ব হয়েছে ‘প্রক্রিয়াগত কারণে’। তবে তারা চুক্তির প্রতি তাদের ‘প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত’ করেছে।
হামাস জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে তারা গাজায় চলমান সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে অগ্রসর হতে চায়।
চুক্তির প্রেক্ষাপট
ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা এই যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি শনিবার মধ্যস্থতাকারী কাতারের মাধ্যমে অনুমোদন করে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই চুক্তি গাজার বর্তমান সংকটের একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই চুক্তি যুদ্ধের মূল লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। তবে, ইসরায়েলের উগ্র জাতীয়তাবাদী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এই চুক্তিকে সমালোচনা করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি একে ‘বেপরোয়া’ এবং ‘যুদ্ধের অর্জনকে ধ্বংস করার চুক্তি’ বলে মন্তব্য করেন।
গাজায় যুদ্ধের ভয়াবহতা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায়। এই হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০-এর বেশি মানুষ জিম্মি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় ৪৬,৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে, ইসরায়েল দাবি করেছে যে, নিহতদের মধ্যে হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাও রয়েছে।
জিম্মি মুক্তি প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইসরায়েলের সরকার জানিয়েছে, এই যুদ্ধবিরতির আওতায় ধাপে ধাপে আরও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। তবে, এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে হামাসের প্রতিশ্রুতির প্রতি তাদের আন্তরিকতার ওপর।
পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উদ্যোগ
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজা এবং ইসরায়েলে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উভয় পক্ষকেই সংযত থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই চুক্তিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজা-ইসরায়েল সংঘাতের এই যুদ্ধবিরতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এটি শুধুমাত্র একটি সাময়িক সমাধান, তবে এর মাধ্যমে উভয় পক্ষের মাঝে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে।
Latest News Of Signalbd.com