বাংলাদেশ

কেন্দ্রীয় কমিটি বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটি স্থগিত

রোববার (২৭ জুলাই) বিকেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিফাত রশিদ বলেন, “অর্গানোগ্রামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত দেশের সব কমিটির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।” তিনি অভিযোগ করেন যে কিছু পরাজিত শক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম রোধে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

রিফাত রশিদ আরও বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা নিজেদের প্ল্যাটফর্মকে কলুষিত না করতে দায় স্বীকার করে সব কমিটি স্থগিত করছি।”

কেন এই সিদ্ধান্ত

সম্প্রতি গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতা চাঁদাবাজির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলাও হয় এবং চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঘটনাটি সংগঠনের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করায় কেন্দ্র থেকে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

চাঁদাবাজির মামলার পটভূমি

গত ১৭ জুলাই গুলশান ৮৩ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হুমকি-ধমকি দিয়ে প্রথমে নগদ ১০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এরপর ১৯ জুলাই রাতে অভিযুক্তরা আবারো একই বাড়িতে গিয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে। এ ঘটনায় শাম্মী আহমেদের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ তদন্ত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম, সাদাব এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ড

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের প্রত্যেকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। রিমান্ড শুনানির সময় পুলিশ জানায় যে এই ঘটনার পেছনে আরও বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই অভিযোগই শেষ পর্যন্ত সংগঠনের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়িয়ে দেয়।

সংগঠনের ভাবমূর্তিতে প্রভাব

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি রিফাত রশিদ স্বীকার করেন যে এ ধরনের ঘটনায় সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “এই প্ল্যাটফর্ম বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক। কিছু ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা যেন জনগণের আস্থা হারিয়ে না ফেলি, সেটাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব।”

এ সিদ্ধান্তে আপাতত সারা দেশে স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের কোনো কমিটি সক্রিয় থাকবে না। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

রিফাত রশিদ জানান, “দ্রুতই সংগঠনের নতুন সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করা হবে। আমরা নীতি ও আদর্শের বাইরে কোনো কিছুই বরদাশত করবো না।”

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের এই প্ল্যাটফর্মের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।

বিশ্লেষণ ও পরবর্তী পদক্ষেপ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতো একটি প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম স্থগিত হওয়া শিক্ষার্থী রাজনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। তবে একই সঙ্গে এটি সংগঠনের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপও হতে পারে।

এখন দেখা যাচ্ছে, এই ঘটনার পরে সংগঠনের নেতৃত্ব নতুন করে নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে চায়। কীভাবে কেন্দ্রীয় কমিটি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, সেটিই এখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

সারসংক্ষেপ  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারাদেশের সকল কমিটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদ ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন। সম্প্রতি এক চাঁদাবাজির মামলায় সংগঠনের কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটি স্থগিত হওয়ার ফলে সংগঠনটির সামনে নতুন করে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই আন্দোলন তার মূল লক্ষ্য ও আদর্শে ফিরে যেতে পারে কি না, তা নির্ভর করবে নেতৃত্বের স্বচ্ছতা ও দৃঢ়তার ওপর।

এম আর এম – ০৫৪২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button