গাজ্জায় ইসরায়েলি হামলা, একদিনে নিহত ৮৩ ফিলিস্তিনি

গাজ্জার অবরুদ্ধ উপত্যকায় মানবতা বিপর্যয়; ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি
পশ্চিম এশিয়ার অবরুদ্ধ গাজ্জা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলা আজ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। একদিনে ৮৩ জন নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের এই বর্বরতা থেমে নেই। শুধু তাই নয়, মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দিতে গিয়ে অতিরিক্ত ৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন চারশোরও বেশি।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে মোট প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৩৩২ জনে। যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক মারাত্মক অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে লেখা হবে।
গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করুণ বিবরণ
গত ১ আগস্ট রাতে তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলু অ্যাজেন্সি এই ধ্বংসযজ্ঞের খবর জানিয়েছে। গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্রই আরও ৫৫৪ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এর ফলে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৩ জনে।
বিশেষ করে, মানবিক ত্রাণ সরবরাহের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে ৫৩ জন। আহত হয়েছে ৪০০-এরও বেশি। এর ফলে ২৭ মে থেকে চলমান এই সংঘর্ষে ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে মোট ১,৩৮৩ জন এবং আহত হয়েছে ৯,২১৮ জন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের পটভূমি: কেন এমন বর্বরতা?
গাজ্জা উপত্যকা ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলের এক কঠোর অবরোধের মধ্যে আছে। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক সামগ্রীর প্রবেশ সীমিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও নিয়মিত ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং ভূ-পৃষ্ঠের আক্রমণ গাজ্জাকে এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকাংশই শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের চেষ্টা করলেও, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং সামরিক উত্তেজনা যে কোনো মুহূর্তে প্রাণঘাতী রূপ নিতে পারে। ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানগুলো প্রায়ই ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ বলে আখ্যায়িত হলেও, এতে বহু বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা
গাজ্জায় চলছে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বেড়েছে। জাতিসংঘ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, এবং বিশ্বের বহু দেশ ইসরায়েলের এই নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা অবরুদ্ধ গাজ্জার মানুষের প্রতি অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার দাবি তুলেছে।
বিশ্বের অনেক দেশের প্রধান নেতারা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলকে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা এই সংঘর্ষকে বন্ধ করার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে।
গাজ্জার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার কঠোর বাস্তবতা
গাজ্জার বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত ভয়ে, অনিশ্চয়তায় বসবাস করছেন। দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলো রোগী ধারণের অতিরিক্ত চাপের মধ্যে রয়েছে। ঔষধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে।
শিশু, নারী ও বয়স্কদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। স্কুল বন্ধ এবং জীবিকা নির্বাহের সুযোগ কমে যাওয়ার ফলে সামগ্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
মানবিক ত্রাণ কর্মীদের বিপদজনক পরিস্থিতি
ত্রাণ সংগঠনগুলোও একদম সীমার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। মানবিক সাহায্য নিয়ে গাজ্জায় প্রবেশ করাটা প্রাণঘাতী হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ৫৩ জনের কথা এ কথা প্রমাণ করে। নিরাপত্তার অভাবে অনেক সময় সাহায্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
ত্রাণকর্মীরা বারবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হচ্ছেন, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী।
ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি প্রভাব
এই সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভবিষ্যতের প্রজন্মের ওপর অনেক বেশি কঠিন হবে। শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, মানসিক ট্রমার পরিমাণ বাড়ছে। অনেক শিশু নিজেদের বাড়ি থেকে উদ্বাস্তু হয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে।
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত এখন ঝুঁকির মুখে। এই অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেক দূরের কথা হয়ে থাকবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয়
এই বর্বরতা বন্ধ করতে বিশ্বকর্মী ও শান্তিপ্রিয় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। মানবাধিকার রক্ষা এবং সঠিক ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব লীগসহ অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলোকেও ইসরায়েলের ওপর তাদের প্রভাব ব্যবহার করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে হবে।
গাজ্জার মানুষের আহ্বান
গাজ্জার সাধারণ মানুষ শান্তিতে বাঁচতে চায়। তারা শুধু একটি নিরাপদ পরিবেশ এবং মানবিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। তাদের আহ্বান – বর্বরতা বন্ধ কর, শান্তি স্থাপন কর।
সংক্ষেপে
- একদিনে গাজ্জায় ইসরায়েলের হামলায় ৮৩ ফিলিস্তিনি নিহত।
- মানবিক সাহায্য নিতে গিয়ে আরও ৫৩ জন নিহত, ৪০০+ আহত।
- ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে মোট নিহত ৬০,৩৩২ এবং আহত ১,৪৭,৬৪৩।
- গাজ্জা উপত্যকা ইসরায়েলের অবরোধে মানবিক সংকটে।
- বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি।
- ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য বিশেষ উদ্বেগ।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ অপরিহার্য।
MAH – 12099 , Signalbd.com