‘ভিক্ষুকের’ বাসায় পুলিশের অভিযান, ৪ ভরি সোনা ও সাড়ে চার লাখ টাকা উদ্ধার

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এক নারীর বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই নারী নিজেকে ভিক্ষুক হিসেবে পরিচয় দিলেও তদন্তে উঠে এসেছে, আসল পরিচয় ভিন্ন। তাঁর কাছে ভিক্ষার চেয়ে চুরি ও প্রতারণাই ছিল মূল উপার্জনের মাধ্যম।
ঘটনাটির বিস্তারিত
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক নারীর নাম তসলিমা আক্তার (৩৫)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুক সেজে চলাফেরা করতেন। স্থানীয়ভাবে তাঁকে ভিক্ষুক বলেই সবাই চিনত। কিন্তু সোমবার রাতের অভিযানে তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা।
তসলিমার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব কাঠগড় এলাকায়। তিনি মৃত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী। স্থানীয়দের সন্দেহ ছিল, এত অল্প বয়সে শুধুমাত্র ভিক্ষাবৃত্তি করে তাঁর এমন সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়। অবশেষে পুলিশের অভিযানে সেই সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয়েছে।
কীভাবে ধরা পড়লেন তসলিমা?
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারগামী এক প্রবাসীর স্ত্রী খাদিজাতুল কোবরা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় কয়েকজন ভিক্ষুক তাঁর কাছে টাকা চাইতে আসে। হঠাৎ ভিক্ষুকদের মধ্যে নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। সুযোগ বুঝে তসলিমা কৌশলে ভুক্তভোগীর ব্যাগের চেইন খুলে দুটি স্বর্ণের আংটি নিয়ে পালিয়ে যান।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগী লোহাগাড়া থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিকে শনাক্ত করে সোমবার রাতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তসলিমার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধার হয়।
পুলিশের বক্তব্য
লোহাগাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহেদ হোসেন জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযানে নামে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তসলিমাকে শনাক্ত করা হয়। পরে তাঁর বাসায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তসলিমা বহুদিন ধরে ভিক্ষুক সেজে চুরি করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশে তাঁকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।
এমন ঘটনা দেশে নতুন নয়। ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে প্রতারণা বা চুরির অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরগুলোতে এমন ভুয়া ভিক্ষুক চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা একদিকে মানুষের সহানুভূতি কাজে লাগায়, অন্যদিকে কৌশলে অর্থ-স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়।
চট্টগ্রামে তসলিমার ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, এ ধরনের ভুয়া ভিক্ষুক চক্র এখন গ্রাম ও শহর উভয় জায়গায় বিস্তৃত।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ হতবাক যে যাঁকে এতদিন ভিক্ষুক মনে করা হতো, তাঁর বাড়ি থেকে এত টাকা ও সোনা উদ্ধার হলো। স্থানীয়দের মতে, ভিক্ষাবৃত্তি করে এ ধরনের সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়।
ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— শহরের রাস্তায় যারা ভিক্ষা করছে, তাদের সবাই কি সত্যিই অসহায়? নাকি তাদের মধ্যেও অনেকেই প্রতারণায় লিপ্ত?
বিশেষজ্ঞ মতামত
সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃত ভিক্ষুক ও প্রতারক ভিক্ষুকদের আলাদা করা জরুরি। প্রতারণার কারণে প্রকৃত অসহায়রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ সাধারণ মানুষও সহানুভূতি দেখাতে দ্বিধা বোধ করছে।
এ ছাড়া আইনের শাসন নিশ্চিত করা ও ভুয়া ভিক্ষুক চক্র ভেঙে দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানো গেলে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিশেষে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার এই ঘটনা আবারও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ভিক্ষুক সেজে প্রতারণা ও চুরির মাধ্যমে অপরাধীরা কীভাবে মানুষের সহানুভূতি কাজে লাগাচ্ছে। পুলিশের তৎপরতায় ধরা পড়েছে এক নারী, কিন্তু এর পেছনে আরও বড় কোনো চক্র সক্রিয় কি না— তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
এমন ঘটনায় মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে— আমাদের শহর ও গ্রামের রাস্তায় দেখা ভিক্ষুকদের কতজন প্রকৃত অসহায়, আর কতজন প্রতারক?
এম আর এম – ১০৫০, Signalbd.com