পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার আহ্বান ইলন মাস্কের

বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক আবারও আলোচনায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর নীতি এবং সাম্প্রতিক আদালতের এক রায়ের সমালোচনা করে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডের প্রতি তার এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
আদালতের রায়ের পর মাস্কের প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদালত এক রায়ে বলেছে, ইইউ-এর সদস্য দেশ আয়ারল্যান্ড আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসনের সুযোগ দিতে বাধ্য। এর আগের দিনই আয়ারল্যান্ডের নিজস্ব আদালত বলেছিল, তাদের এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এই বিপরীতধর্মী রায়ের জের ধরেই ইলন মাস্ক এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, “আয়ারল্যান্ডের ইইউ ত্যাগ করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মতে শুধু আয়ারল্যান্ড নয়, বরং সব দেশেরই ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত। ইইউ বর্তমানে ইউরোপের গণতন্ত্র ধ্বংস করছে।”
ইইউ নীতিতে শরণার্থী ইস্যু
২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেন সংকট এবং ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে লাখ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। শুধু ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীর সংখ্যাই প্রায় সাড়ে ৪ মিলিয়নের বেশি।
ইইউ “অস্থায়ী সুরক্ষা নির্দেশিকা” (Temporary Protection Directive) অনুযায়ী এসব শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও বসবাসের সুযোগ দিয়ে আসছে। তবে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নিয়ে সদস্য দেশগুলোতে মতবিরোধ দেখা দিচ্ছে।
আয়ারল্যান্ডের অবস্থান ও দ্বন্দ্ব
আয়ারল্যান্ডে গত কয়েক মাসে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। দেশটির নিজস্ব আদালত এক রায়ে জানায়, তাদের এ ধরনের আবাসন প্রদানের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু ইইউ-এর উচ্চ আদালতের রায়ে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, এই নীতিমালা অনুসারে আয়ারল্যান্ডকে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতেই হবে।
এমন পরিস্থিতিতেই মাস্কের এই মন্তব্য সামনে আসে। আন্তর্জাতিক মহলে কেউ কেউ মনে করছেন, এটি আয়ারল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ নীতি ও ইইউ-এর নীতির মধ্যে দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
মাস্কের মন্তব্যের পর ইউরোপের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, একজন মার্কিন নাগরিক হয়েও ইলন মাস্ক ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করছেন যা স্বাভাবিক নয়। আবার অনেকেই মনে করছেন, ইইউ নীতির সমালোচনায় মাস্ক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইউরোপীয় দেশগুলোকে বৃহৎ পরিসরে অভিবাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছিলেন, “যদি অভিবাসন বন্ধ না করা হয়, তাহলে ইউরোপ আর ইউরোপ থাকবে না।” মাস্কের মন্তব্য তারই প্রতিধ্বনি বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইলন মাস্কের মন্তব্য শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া নয়; বরং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। তারা বলছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর ভেতরে অভিবাসন ইস্যু নিয়ে বিভক্তি আগামীতে আরও বাড়তে পারে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী দলগুলো ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। মাস্কের এই মন্তব্য তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ব্যবহারকারী মাস্কের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তাদের মতে, ইইউ নীতিগুলো এখন সদস্য দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকে এর বিপরীতে বলছেন, ইউরোপের একক নীতি ছাড়া যুদ্ধ বা সংকট থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্কের মন্তব্যের তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব না পড়লেও এটি ইইউ নীতি ও শরণার্থী ইস্যু নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও উসকে দেবে। আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদী মতবাদের উত্থান এবং ইইউ বিরোধী আন্দোলন আগামী দিনে বাড়তে পারে।
শেষ কথায় বলা যায়, ইলন মাস্কের সাম্প্রতিক মন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। এখন দেখার বিষয়, ইইউ সদস্য দেশগুলো অভ্যন্তরীণ নীতিগত মতপার্থক্য কাটিয়ে কীভাবে এগিয়ে যায়।
এম আর এম – ০৬৪৫, Signalbd.com