ফ্যাক্ট চেক

নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান | সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬৫-১৬৬

Advertisement

পবিত্র কোরআনে বারবার ঘোষণা এসেছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান”। এই ঘোষণা শুধু একটি বাক্য নয়, এটি মুমিনদের জন্য শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। বদর ও ওহুদের যুদ্ধ থেকে শুরু করে জীবন ও মৃত্যুর প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছাই সর্বশক্তিমান। মানুষকে বুঝতে হবে, ক্ষমতা, সম্মান, বিপদ কিংবা শান্তি—সবই তাঁর হাতে।

আল্লাহর সর্বশক্তিমান ঘোষণার অর্থ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন: “ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর”—অর্থাৎ, আল্লাহ সর্বকিছুর ওপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। তিনি যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই ঘটনার রূপ দেন। কোনো কিছুই তাঁর অগোচরে নয় এবং তাঁর ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছুই ঘটে না। এই বিশ্বাস মুমিনের অন্তরে দৃঢ় আস্থা সৃষ্টি করে।

বদর ও ওহুদের যুদ্ধের শিক্ষণীয় দিক

কোরআনের আয়াতে উল্লেখ আছে, বদরের যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় অল্প হলেও আল্লাহর সাহায্যে বড় বিজয় অর্জন করেছিলেন। অপরদিকে, ওহুদের যুদ্ধে সংখ্যা বেশি থাকা সত্ত্বেও তারা বিজয় অর্জন করতে পারেনি। বদরের যুদ্ধে ৭০ জন কাফের নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দি হয়। অথচ ওহুদের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ৭০ জন শহিদ হন। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ মুসলমানদের শিক্ষা দেন যে, বিজয় শুধুমাত্র সংখ্যার উপর নির্ভর করে না, বরং আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

ওহুদের যুদ্ধে ভুল থেকে শিক্ষা

ওহুদের যুদ্ধে রাসুল (সা.) নির্দেশ দিয়েছিলেন পাহাড়ের ঘাঁটি না ছাড়তে। কিন্তু কিছু সাহাবি তা অমান্য করলে সুযোগ নেয় শত্রুরা। এতে মুসলিম বাহিনীর জন্য বিপদ নেমে আসে। এ থেকে শিক্ষা হলো, আল্লাহর নির্দেশ ও নবীর নির্দেশ মান্য করা ছাড়া নিরাপত্তা নেই। এই ঘটনা শেষে আল্লাহ ঘোষণা করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান”, যা মুমিনদের মনে করিয়ে দেয় যে বিজয় ও পরাজয় তাঁর হাতে।

সম্মান ও অপমানের মালিক আল্লাহ

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “বল, হে আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দেন, যাকে ইচ্ছা কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত ২৬)।
এটি বোঝায়, মানুষের সম্মান, ক্ষমতা কিংবা সম্পদ কোনো কিছুরই স্থায়িত্ব নেই। সব কিছু আল্লাহর অনুগ্রহ। তাই অহংকার নয়, বরং কৃতজ্ঞতা ও বিনয়ী হওয়াই মুসলমানের কাজ।

পৃথিবীতে আল্লাহর ক্ষমতার ভারসাম্য

মানুষকে আল্লাহ বিভিন্ন অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন—কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র; কেউ শাসক, কেউ সাধারণ মানুষ। এর মাধ্যমে তিনি পরীক্ষা করেন কে কৃতজ্ঞ হয় আর কে অবাধ্য হয়। কোনো জাতি যদি অন্যায় ও অহংকারে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তাদের শক্তি কেড়ে নেন এবং নতুন কাউকে শক্তি দেন।
কোরআনে উল্লেখ আছে, “যদি আল্লাহ একদল মানুষকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে ইবাদতের স্থানগুলো ধ্বংস হয়ে যেত।” এটি প্রমাণ করে, পৃথিবীতে ভারসাম্য ও ন্যায়বিচার রক্ষায় আল্লাহ নিজেই কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।

মুমিনদের জন্য আত্মবিশ্বাসের উৎস

“নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান” এই আয়াত মুমিনদের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। যখন কোনো বিপদ আসে, তখন মনে রাখতে হবে সবকিছুই আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ। তিনি চাইলেই বিপদকে সহজ করে দেন, আবার যে কোনো কঠিন অবস্থাকে কল্যাণে পরিণত করেন। তাই হতাশ না হয়ে সবকিছু আল্লাহর উপর ভরসা করাই প্রকৃত ঈমান।

বর্তমান জীবনে এর প্রভাব

আজকের পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা, অস্থিরতা এবং ভয়-ভীতির মধ্যে বসবাস করা মানুষের জন্য এই আয়াত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পথ অনুসরণ, ধৈর্যধারণ এবং আল্লাহর উপর আস্থা রাখার শিক্ষা দেয় এটি। আমাদের সাফল্য বা ব্যর্থতা কোনো কিছুর জন্যই অহংকার বা হীনমন্যতার কারণ নয়, কারণ এর নিয়ন্ত্রক শুধুই আল্লাহ।

আল্লাহ সর্বশক্তিমান। পৃথিবীর সব পরিবর্তন, সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয় তাঁর ইচ্ছায় ঘটে। তাই একজন মুমিনের উচিত আল্লাহর উপর নির্ভর করা, নবীর নির্দেশ মেনে চলা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিনয়ী ও কৃতজ্ঞ থাকা। এই বিশ্বাসই মানুষকে শান্তি ও সফলতার পথে পরিচালিত করবে।

এম আর এম – ০৫৫৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button