বিশ্ব

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় শতাধিক নিহত, ত্রাণ সংকট

Advertisement

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় কমপক্ষে ১১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন ক্ষুধার্ত, যারা ত্রাণ সংগ্রহের জন্য একত্রিত হয়েছিল। এই ভয়াবহ আঘাতে অনেকে আহত হয়েছেন এবং পরিস্থিতি ক্রমশ গুরুতর হয়ে উঠছে।

গাজায় ত্রাণ কেন্দ্রে বর্বরতা

গত সোমবার (২১ জুলাই) কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর নিশ্চিত করেছে। তারা সম্প্রতি একটি মোবাইল ফোনের ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে, যেখানে দেখা যায়, রাফাহর একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ভিড় কমানোর জন্য ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) পেপার স্প্রে ব্যবহার করছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, পেপার স্প্রে ছিটানো শুরু হতেই, সেখানে জড়ো থাকা নিরীহ মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে ছুটতে শুরু করে। অনেকে খাবার নেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল, কিন্তু হঠাৎ আতঙ্কের ছায়ায় ত্রাণ পাওয়ার আশায় থাকা মানুষগুলো ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

জিকিম ক্রসিং-এ প্রাণহানি

গাজার উত্তর অংশের জিকিম ক্রসিং এলাকা ত্রাণ নিতে যাওয়া বেসামরিক জনগণের উপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। এতে অন্তত ৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন।

এছাড়াও গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে পৃথক হামলায় আরও ছয় জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত একদিনে এই দু’টি স্থানে সংঘটিত এই হামলার ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ জনে। এর আগের দিন অর্থাৎ ২০ জুলাই একইভাবে ৩৬ জন মারা গিয়েছিলেন।

গাজায় ত্রাণ সংগ্রহে প্রাণহানির পরিসংখ্যান

গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯০০ এরও বেশি মানুষ। এই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগও বাড়ছে।

ত্রাণ ও শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা (UNRWA) জানিয়েছে, গাজার সীমান্তে তাদের কাছে এমন পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে যা গাজার জনগণের জন্য তিন মাস পর্যন্ত যথেষ্ট। কিন্তু গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার এই খাদ্য সরবরাহ আটকে রেখেছে, যার ফলে ত্রাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গাজার বর্তমান সংকট: ভূ-রাজনৈতিক পটভূমি

গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে হামাস গাজার শাসনভার গ্রহণ করার পর থেকেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

ইসরায়েল একদিকে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বললেও, তার ফলে গাজার নিরীহ জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎসহ বেসিক জীবনযাত্রার সকল সুবিধা গাজায় প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ বা সীমিত হয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক সাহায্যের আহ্বান

গাজায় ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নেতারা ত্রাণ বরাদ্দ দ্রুত চালু করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাজার হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন। তাদের মতে, সঙ্কট অব্যাহত থাকলে অসংখ্য জীবন বিপন্ন হতে পারে।

গাজায় নিরীহ মানুষের জীবনযাত্রা: এক মানবিক দুর্দশার চিত্র

ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্যের জন্য দীর্ঘ লাইন, পানি ও বিদ্যুতের অভাব, স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে সংকট — এই সবই গাজার সাধারণ মানুষের জীবনের কঠোর বাস্তবতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সমাধানের জন্য শুধুমাত্র সামরিক পদক্ষেপ নয়, রাজনৈতিক সংলাপ ও মানবিক সাহায্যের দ্রুত পুনঃসর্বোধারণ জরুরি।

ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যৎ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব

ফিলিস্তিনি জনগণ নিরাপদে জীবনযাপন ও তাদের মৌলিক অধিকারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা, অবাধ ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের স্বার্থযুক্ত দেশগুলো, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য অবিলম্বে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

সংক্ষিপ্ত তথ্য:

  • গাজায় ২১ জুলাই একদিনে ১১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত।
  • অধিকাংশ নিহত ত্রাণ নিতে আসা ক্ষুধার্ত মানুষ।
  • জিকিম ক্রসিংয়ে অন্তত ৬৭ জন নিহত।
  • গাজার বিভিন্ন ত্রাণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
  • মে মাস থেকে ৯০০+ ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত।
  • জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা তিন মাসের খাদ্য মজুদ রেখেও সরবরাহ বন্ধ।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থা উদ্বিগ্ন।
মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button